মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজে গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২লক্ষ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুর মুরালটি নির্মান কাজ শুরু করলেও তা সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়েছে বেশ কিছু অংশ। ফলে লোকলজ্জার ভয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় মুরালটিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে বলে দাবি স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের। এ ব্যপারে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে ১ মার্চ সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।অন্যথায় কলেজে তালা ঝুলানোর হুমকি দেন তারা। এমনকি তারা বিষয়টি তুলে ধরে রাণীশংকৈল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ প্রসংঙ্গে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, তৎকালিন সময়ে তিনি জেলা পরিষদ থেকে ২ লক্ষ টাকার বরাদ্দ দিয়েছেন এবং ১ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের প্রতিবাদের যুক্তি রয়েছে।
কলেজের উপাধ্যাক্ষ জামাল উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারণ বঙ্গবন্ধু মুরাল নির্মাণের একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সভাপতি কলেজের অধ্যাপক ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম, তারাই ভালো বলতে পারবেন।
মুরাল নির্মান কমিটির সম্পাদক ও কলেজ অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, মুরাল নির্মাণের জন্য এমপির দেয়া ১ লক্ষ টাকা পেয়েছি এবং ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় কাজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুরাল আর্টিষ্টকে কনট্রাক দেয়া হয়েছে, তার গাফিলতির জন্যই কাজটির এমন অবস্থা। তার সাথে অনেকবার যোগাযোগ করেও তাকে কাজে ধরাতে পারিনি, শেষে আমরা বিকল্প ভাবে কাজটি ৭ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার সকল প্রস্তুতি নিয়েছি।
মুরাল নির্মাণ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যাপক সইদুল হক বলেন, জেলা পরিষদ থেকে ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও এ পর্যন্ত ১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে বাকী এক লক্ষ টাকা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তবে ১০ মার্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মুরালটি সম্পন্ন হবে। তবে মুরাল নির্মাণে কোন দূর্ণীতি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি সেলিনা জাহান লিটা বলেন, সেসময় আমি উপজেলায় জাতির পিতার কোন মুরাল না থাকায় একটি মুরাল তৈরীর উদ্যোগ নিলে রাতারাতি রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ মুরাল নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ফলে আমি আর এ বিষয়ে অগ্রসর হইনি। কিন্তু একটি মুরাল তৈরী করতে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তা সমাপ্ত না হওয়া এবং কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়া অত্যান্ত দূ:খজনক বিষয়। সর্বোপরি সেই কলেজে সম্পৃক্ত রয়েছেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এবং মুরাল নির্মাণ কমিটির সভাপতি, তিনি থাকতে এ ধরণের কাজ কিভাবে সম্ভব তা ভাবতে অবাক লাগছে। আমি এ ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানাই।
রাণীশংকৈল উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৭-১৮ অর্থ বছরে জেলা পরিষদ থেকে দুই লক্ষ টাকার মধ্যে প্রাপ্ত এক লক্ষ টাকা, কলেজ থেকে প্রাপ্ত চার লক্ষ টাকা এবং বর্তমান সাংসদ এর নিকট থেকে প্রাপ্ত এক লক্ষসহ মোট ছয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুই বছর ধরে জাতির পিতার মুরাল নির্মাণ করছে মুরাল নির্মাণ কমিটি। অথচ কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই তা ধ্বসে পড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মুরালের নিচে রয়েছে কলেজের ড্রেনেজ ব্যবস্থা-যা চরম অপমানজনক।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মুরাল নির্মাণে চরম দূর্ণীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। আর এখন দূর্ণীতি ঢাকতে লোকলজ্জার ভয়ে মুরালটি ঢেকে রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, আমরা যুবলীগ-ছাত্রলীগ কোভাবেই এ গর্হিত কাজ মেনে নেবো না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ মুরাল পূণ:নির্মাণ না করা হলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে রাণীশংকেল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন যেখানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, ক্ষণগণনা করা হচ্ছে সারাদেশে, সেখানে এ উপজেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজে বঙ্গবন্ধুর মুরাল ঢেকে রাখা হয়েছে নোংরা কাপড় দিয়ে। এ লজ্জা কোথায় রাখি? আমি যতোদুর জানি ওই কলেজের নীতি নির্ধারকরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন নিয়োগ বাণিজ্যে। তাদের এসব বিষয় দেখার বা অনুধাবনের সময় কোথায়। আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে জেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দসহ জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।