বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
মোংলা প্রতিনিধি: সুন্দরবনে গহিনে মাছ ধরতে গিয়ে নতুন গড়ে ওঠা দস্যুবাহিনীর হামলা ও অমানুষিক নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে ফিরে এসেছে মোংলার একদল জেলে। শুধু নির্যাতন নয়-জেলে আহরিত কয়েক লাখ টাকার মাছ আর জালও নগদ অর্থ লুটে নিয়েছে সশস্ত্র দস্যুরা। নির্যাতনের শিকার জেলেরা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ট্রলার যোগে মোংলার ফেরীঘাটে পৌছালে তাদের স্বজনদের কান্না আর আর্তনাতে সেখানকার আকাশ-বাতাস যেন ভারি হয়ে ওঠে। তবে বন বিভাগ বনদস্যু বলতে নারাজ, তারা বলছে, যারা মারধর করেছে এরা বনদস্যু নয়, জেলারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলেদের ট্রলারে পৌছে দিয়েছে সেখানকার কোষ্টগার্ড সদস্যরা।
রক্তাক্ত আহত অবস্তায় ফিরে আসা জেলে ও তাদের মহাজন এবং স্বজনরা জানান, গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে মোংলার সোনাইলতলা এলাকার একদল জেলে দুবলা ফরেষ্ট অফিস থেকে বনবিভাগের বৈধ পাস পারমিট নিয়ে সাগরপাড়ের দুবলা চরাঞ্চল সংলগ্ন কুকিলমনির গহীন কালা মিয়ার চরে মাছ ধরতে যায়। মাছ আহরনের শুরুতে নতুন গড়ে ওঠা দস্যু মাহাফুজ বাহিনীর সদস্যরা জেলেদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং দু’দিন সময় বেঁধে দেয়। নির্ধারিত সময় জেলেদের চাঁদার টাকা পরিষোধ না করায় রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ককিলমনি এলাকার কালামিয়ার চরে অবস্থানরত জেলে বহরে হানা দেয় সশস্ত্র সদস্যুরা।
নৌকায় ঘুমিয়ে থাকা জেলেরা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৪টি ট্রলার যোগে ২৫-৩০ জনের এ দস্যু গ্রুপের সদস্যরা এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে আতংক সৃস্টি এবং নৌকায় উঠে নিরীহ জেলেদের বেদড়ক মারধর শুরু করে। এসময় তাদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা কোন দেয়া হয়নী তা জিজ্ঞেস করে এবং জেলেদের মহাজনদের খুজতে থাকে। ওই জেলে বহরে থাকা নৌকায় প্রায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০জন জেলেদের উপর দু’ঘন্টার বেশি তান্ডব এবং লুটপাট চালায় দস্যু বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দস্যুদের মারধর ও নির্যাতনে দিগবিদিগ হয়ে জেলেরা নদী ও চরাঞ্চলসহ বনের ভেতরে ঝাপিয়ে পড়ে প্রাঁন রক্ষার চেষ্টা করে। আর যে সকল জেলে নৌকায় আটকা পড়ে তাদের ভাগ্যে জোটে অমানুষিক নির্যাতন। জেলেদের কারো শরিরে রয়েছে ধারালে অস্ত্রের আঘাত, আবার কারো লাঠিপেটার ক্ষত। এ ছাড়া জেলেদের হাত-পা থেথলে দেয়া হয়। লুটে নেয়া হয়-জেলেদের আহরিত প্রায় ৫ লাখ টাকা মাছ, মুল্যবান জাল ও নগদ অর্থসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল। এসময় জেলেদের আত্নচিৎকারে অন্য পাশে থাকা জেলেরা তাদের অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সেখানকার বন বিভাগের টহল ফাড়ীঁ অফিসে খবর দেয়া হয়। কিন্ত কোকিল মনি ওই ফরেষ্ট অফিসে জনবল কম থাকায় ঘটনা স্থলে এসে জেলেদের উদ্ধার করতে ব্যার্থ হয় বন রক্ষিরা। তবে আগে থেকেই দস্যুদের চাদাঁদাবী করার কথা কোকিল মনি ফরেষ্ট অফিসারকে জানানো হয়েছিল বলে দাবী আহত জেলেদের। দস্যুদের জেলে বহরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার সাথে সাথে দুবলার চরে থাকা কোষ্টগার্ডের অফিসে আহত জেলেদের নেয়া হয় এবং সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় কোষ্টগার্ড সদস্যরা।
মোংলার জেলে মহাজন আসাদুজ্জামান আকাশ ও হাফিজ জানায়, লুটতরাজ শেষে দস্যুরা ফিরে গেলে বনবিভাগের ককিলমনি টহলফাঁড়ির বনরক্ষীদের সহায়তায় আহত জেলেদের উদ্ধার করে। পরে জাল-মাছ হারিয়ে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে ফিরে আসা জেলেরা ঘটনার বর্ননা করেন। সোমবার রাতে মোংলায় পৌছানোর পর আহত জেলেদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিক পর্যায় মোংলা থানাকে অবহিত করা হয়েছে, মামরার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় এ জেলে মহাজনরা।
আহত জেলেরা হলেন মোংলার আমড়াতলা গ্রামের হাফিজুল ফকির (২৫), সবুজ রফিক (২০), সাইদুল শেখ (৩০), জব্বার ফকির (৬০), শুকুর ফকির (৩০), মুকুল ফকির (২৫) রফিকুল (৩০), হাফিজ (৩৫) ও কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি গ্রামের জামাল গাইন (৪২)। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন জেলে মহাজন ও তাদের স্বনরা।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন, জানান, আমাদের জানা মতে সুন্দরবনে এখন কোন বন দস্যু নাই তবে বোরবার রাতে যে ঘটনা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে জেলেরা তাদের মাছ ধরা নিয়ে দন্ধ হয়েছে। যা পরবর্তীতে মারা মারীতে পরিনত হয়। তবে কোকিল মনি ফরেষ্ট অফিসে মোবাইল নেট সব সময় পাওয়া যায়না বিদায় সম্পুর্ন ঘটনা জানা সম্ভব হয়নী।
কোষ্টগার্ড অপারেশন কর্মকর্তা জানায়, রোববার রাতে একদল জেলে আহত অবস্থায় ষ্টেশনে আসে এবং তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও সকল সহায়তা শেষে তাদের মোংলায় পাঠানো হয়েছে। তবে বনদস্যুদের কোজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং লুটপাট ও চাঁদা দাবীর ব্যাপারে কোন কিছু জানাতে পারেনী তিনি।
জীবন-জীবিকার তাগিদে সুন্দরবনের হিংস্র বাঘ-কুমির সহ বন্যপ্রাণীর হিংস্রাত্বক আচারন থেকে রক্ষা পেলেও নতুন করে গড়ে ওঠা সশস্ত্র দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা মেলেনি নিরীহ এ জেলেদের।