সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
আমাদের গৃহপরিচারিকার সঙ্গে আর পারা গেল না। সেদিনই এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। দিন তিনেক যেতে না যেতেই রান্নাবেলায় তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ নাই।’
এ কেমন কথা! পইপই করে বলে দিয়েছি, ‘চাচি, রান্নায় পেঁয়াজ কম দেবেন।’
কে শোনে কার কথা। গৃহপরিচারিকার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। পেঁয়াজ কম দিলে তাঁর রান্না জমে না। মনে হয়, কী যেন কম হয়ে গেছে। হাত নিশপিশ করে। একটু বেশি পেঁয়াজ দিয়ে মনের খচখচানি দূর করেন তিনি।
খবরটা গৃহপরিচারিকাও জানেন—পেঁয়াজের বাজারে আগুন। রান্না শুরুর আগে ‘পেঁয়াজ কম দেবেন, আমরা পেঁয়াজ কম খাই’ বলে নির্দেশনা দিতেই তিনি চোখ-মুখ কুঁচকে বলেন, ‘আইজকাল পেঁয়াজ খাওনেরও উপায় নাই, যা দাম বাড়ছে! বাজারের টেকা পেঁয়াজেই শ্যাষ।’
কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে ‘হুম’ বলতেই সুযোগ পেয়ে যান গৃহপরিচারিকা। অন্য যেসব বাসায় তিনি কাজ করেন, সেখানে ইদানীং পেঁয়াজ নিয়ে কী সব কাণ্ড ঘটছে, তার ফিরিস্তি দিতে শুরু করেন। অনুযোগের সুরে বলেন, ‘এক আপা কইছে, পেঁয়াজ বেশি দিলে আর কাজে রাখবে না। অহন একটা বড় পেঁয়াজ দিয়া দুই পদ রান্ধি। মজাগজা কিছুই হয় না। আইজকাল পেঁয়াজ নিয়াও কিপটামি করে।’
২.
ভাড়া বাসার নিচতলায় তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালক থাকেন। তাঁদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। দুজন একসঙ্গে থাকলেও পাক আলাদা। গতকাল দুজন তুমুল বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। বাগ্বিতণ্ডা উপভোগ করতে সোৎসাহে ঘটনাস্থলে যান আমার সহকারী। ঘণ্টা খানেক পর ফিরে এসে সহকারী জানাল, নিরাপত্তাকর্মী ও গাড়িচালকের মধ্যকার বাগ্বিতণ্ডার কারণ পেঁয়াজ।
গাড়িচালক সন্ধ্যায় চড়া দামে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। রান্নাঘরের লকারে সযত্নে সেই পেঁয়াজ রেখেছেন। রাত নয়টার পর রান্না বসাতে গিয়ে পেঁয়াজ পাচ্ছেন না।
গাড়িচালকের অভিযোগ, তত্ত্বাবধায়ক লোক সুবিধার না। এর-ওর বাজার থেকে মেরে দেওয়ার স্বভাব আছে তাঁর। দুর্মূল্যের এই বাজারে পেঁয়াজও মেরে দিয়েছে সে।
পেঁয়াজ চুরির মতো ‘গুরুতর’ অভিযোগ শুনে তত্ত্বাবধায়ক রেগে ফায়ার। ভাগ্যের ফেরায় আজ তত্ত্বাবধায়ক তিনি। তাই বলে পেঁয়াজ চুরি!
গাড়িচালক তক্কে তক্কে আছেন। তত্ত্বাবধায়কের রান্নার সময় আড়ালে-আবডালে রান্নাঘরের দিকে উঁকি মারছেন। তাঁর বিশ্বাস, পেঁয়াজ-চোর (তত্ত্বাবধায়ক) ধরা পড়বেই। কারণ, এই পেঁয়াজ তাঁর কষ্টের টাকায় কেনা।