শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
এম আসমত আলী: ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে বিদেশ পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। তাদের প্রতারনায় নিঃস্ব অসংখ্য বিদেশগামীরা। এমনি কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসছে প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র।
দেশে একশ্রেণির দালাল ও প্রতারক রয়েছে যারা বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিদেশে লোক পাঠায়। আর বিদেশ গমনেচ্ছুরা দিনবদলের আশায় তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে, ঋণ করে তাদের টাকার জোগান দেন। এমনও দেখা গেছে, এদের বিদেশে নিয়ে দালাল চক্র দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও চাপ প্রয়োগ করে অর্থ আদায় করে।
ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি চক্র।
পত্রিকায় ‘ভিসা প্রসেসিং’ শিরোনামে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যেখানে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, কাতার, হংকংয়ের কিছু ভিসা প্রসেস করা হবে বলে জানানো হয়।
একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রাজবাড়ী জেলার খালেক শেখ। তিনিও বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে চার লাখ টাকা হারিয়েছেন। তিনি বনানী মেসার্স কাদের এসোসিয়েটস এর নাঈমুর রহমান নাঈম নামের এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সৌদি আরব ১৪/০৩/২০২১ এ গিয়েছিলেন। তাকে রেষ্টুরেন্টে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন লাখ টাকা নিয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেখানে যেয়ে দেখে যে নাঈম খালেক শেখ কে সাপ্লাই ভিসায় পাঠিয়েছে। তিন মাস কাজ করে কোন বেতন ভাতা দেয়া হয় না। উল্টো খালেক শেখের পাসপোর্ট, আকামা কার্ড সব জোরপূর্বক নিয়ে নেয়, ও অবৈধ বলে ছেড়ে দেয়। নাখেয়ে বিভিন্ন কষ্টের জীবন কাটাতে থাকে। বাড়িতে ফোনে কথা বলার পর আরো ষাট হাজার টাকা দিয়ে কোনো রকমে দেশে ফিরে আসে খালেক। পরে সেই দালাল আদম ব্যবসায়ী নাঈম কাছে টাকা ফেরত চাইলে আজ না কাল বিভিন্ন সময় নিয়ে আজ ও দেয়নি। গত ১৮/০৩/২০২২ তারিখ বিকালে বনানী অফিসে টাকা চাইতে গেলে নাদিয়ে বরং নানারুপ ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়েছে। পরে নিরুপায় হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সচেতন মহলের দাবী কাক্সিক্ষত প্রবাসী কর্মসংস্থান থেকে সুফল পেতে দেশের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদেরই ভূমিকা পালন করতে হবে। বিদেশে গ্রামীণ সাধারণ শ্রমিকদের পাঠানো নিয়ে এ যাবৎ যে ভয়াবহ প্রতারণা হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। কত মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি বিক্রি করে ফতুর হয়েছেন। আবার কেউ কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও পেরেছে। পর্যাপ্ত রেমিট্যান্সের উপর ভিত্তি করেই দেশ একটি শক্ত অর্থনীতির উপর দন্ডয়মান। সুতরাং আমরা সর্বোত আশাবাদী, প্রতারণা বন্ধ করে কাক্সিক্ষত সাফল্যের সিঁড়িতে দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের শতকরা আশিভাগ এজেন্সি লাইসেন্স নিয়ে জনশক্তি রপ্তানির নামে অনিয়ম ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। জাল ভিসা ও পাসপোর্ট দিয়ে মানবপাচার করে তারা। যারা তাদের হাতে প্রতারিত হন তাদের অনেকেই অভিযোগ করেন না। কার কাছে কোথায় অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে সেই বিষয়টিও অনেকের অজানা। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্সি ও তাদের দালালরা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করেন। এসব প্রতারকদের নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ চলছে, যা ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরা হবে।