সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন

বাঘ হত্যা করলে ২ বছর কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা : বনমন্ত্রী

বাঘ হত্যা করলে ২ বছর কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা : বনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ধারা ৩৬ অনুসারে বাঘ হত্যার জন্য দুই বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এবং লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের আইন রয়েছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বাঘ হত্যাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাঘের অবাধ বিচরণ ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

 

আজ শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২২ উপলক্ষে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

বনমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে তিন বছর মেয়াদি ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের জরিপ পরিচালনা, বাঘের শিকার প্রাণী- হরিণ ও শূকরের সংখ্যা গণনা, সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের ফেন্সিং বা বেষ্টনী তৈরিসহ বাঘ সংরক্ষণ ও গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন সংরক্ষণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বনমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘসমৃদ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার লক্ষ্যে তৈরি ঘোষণাপত্রের আলোকে প্রতিবছর ২৯ শে জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’, যা সময়োপযোগী বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্যানুযায়ী আমাদের সুন্দরবন অংশে রয়েছে প্রায় ১১৪টি বেঙ্গল টাইগার এবং ২০২০-২০২১ সালের জরিপ অনুসারে ভারতের সুন্দরবন অংশে আছে প্রায় ৯৬টি বাঘ। আইইউসিএন গ্লোবাল স্পিশিজ রেড লিস্ট ২০২০ অনুসারে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৪৮৫টি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সারা বিশ্বে বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে ‘বিপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ধারা ৩৬ অনুসারে বাঘ হত্যার জন্য দুই বছর ও সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড করা এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বাঘ হত্যাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঘের অবাধ বিচরণ ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বনমন্ত্রী জানান, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের কর্মতৎপরতায় লোকালয়ে বাঘ আসা মাত্র সংলগ্ন গ্রামগুলোতে দ্রুততম সময়ে তা জানানো এবং সেই অনুযায়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে স্মার্ট পেট্রোলিং পদ্ধতি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর শিকার, পাচার ও নিধন বন্ধের কার্যক্রম চলমান আছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘অপরাধ উদ্ঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার প্রদান বিধিমালা ২০২০’ জারি করা হয়েছে। এই বিধিমালায় বাঘের ক্ষেত্রে, বনাঞ্চলের ভেতরে অপরাধী ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং বনাঞ্চলের বাইরে ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কারের বিধান রাখা হয়েছে। ‘বন্য প্রাণীর আক্রমণে জান-মালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা ২০২১’ অনুযায়ী বর্তমানে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তিন লাখ এবং আহত ব্যক্তির পরিবারকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর জন্য সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা মেটাতে সুন্দরবনে ৮০টি পুকুর নতুন খনন ও বিদ্যমান পুকুর সংস্কারের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. এম মনিরুল এইচ খান এবং বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com