রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদকঃ জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার ৩নং ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থশ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মোঃ ফজলুল হক ও প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর দাবী, চতুর্থশ্রেণির কর্মচারী এ নিয়োগে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ প্রার্থীর অংশগ্রহণসহ লক্ষ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। অবৈধ স্বজনপ্রীতির এ নিয়োগকে বতিল করার জোর দাবী জানান তাঁরা। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফজলুল হক হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায় উল্লেখ করে একই গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধ প্রার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে এমন তথ্য নিশ্চিত হয়ে আমরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু স্কুলের সভাপতি আমাদেরকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে অসুবিধা হবে বলে হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘এর আগের অফিস সহকারির নিয়োগ পরীক্ষাতেও এই সভাপতি থাকাকালীন একইভাবে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছিল।’ ‘আমি প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র উচ্চ-শিক্ষিত, পরীক্ষাও অনেক ভালো দিয়েছিলাম । কিন্তু পরে শুনলাম পরীক্ষায় আমি প্রথম হলেও আমাকে প্রথম দেখানো হয়নি। টাকার বিনিময়ে নেওয়া হয়েছে আরেক জনকে’ Ñএভাবেই বলছিলেন পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারি স্বপ্না আক্তার। আরেক প্রার্থী শাপলা আক্তারের শশুর আবুল হোসেনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ, টেহা (টাকা) ছাড়া ইনু (এখানে) চাকরি অব (হবে) না। আগেই সভাপতি ফজু (ফজলুল হক) এহেকজনের কাছ থিকা টেহা নিয়া রাখছে। আমরা এত টেহা কই পামু।’
ইতোমধ্যে বিষয়টি এলাকাসহ পুরোশহরে এখন টক অব দ্যা টপিকসে পরিণত হয়েছে। দূর্নীতির এ বিষয়টি নিয়ে ঝড় উঠছে চায়ের কাপে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, এসব অর্থলোভীদের টাকার জোগান দিতে অনেকের শেষসম্বল পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকে আবার ধার দেনা করার পরও সুধের উপর এনেছে টাকা। তবে এসব অনাচারকে খুব নেতিবাচকভাবে দেখছেন এলাকার সুশীলশ্রেনী। প্রতিবাদস্বরুপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এমন পবিত্র জায়গায় এসব দুর্নীতির জন্য অভিযোগ পত্র পাঠানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে। জোর আবেদন করা হয়েছে নিয়োগটি বাতিল করার জন্য।
এখানেই শেষ নয়, চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলুল হকের এ অনিয়ম সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বের হয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে জানা যায়, এলাকায় ভূমি দস্যুতা, রাজনীতির নামে নেতাকর্মীদেরকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার, চাকুরী দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নলোককে হয়রানিকরাসহ নানা অপকর্মে জড়িত তিনি। জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়নের কোন রাজনৈতিক পদ না থাকলেও প্রতি সংসদ নির্বাচনে উঠান লোক দেখানো মনোনয়নপত্র। অনেকে আবার মনে করছেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরোধিতা করে তার এ মনোয়নপত্র উঠানোর জন্য নিজ গ্রামের রান্তাঘাটসহ নেই তেমন কোন উন্নয়ন। এদিকে বাবার তেমন কোন সম্পত্তি না থাকলেও পড়াশোনা শেষ করে একজন বেকার ছাত্র কিভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে সে বিষয়েও এলাকাবাসী রয়েছে ব্যপক কৌতুহল। অনিয়মের এ নিয়োগ নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিষয়টি নিয়ে সভাপতি ফজলুল হকের কাছে জানতে বার বার মুঠোফনে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়োগ স্বচ্ছ হয়েছে বলে দাবি প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের।
এলাকাবাসীর দাবী, বিষয়টি দুদকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত এ অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে দোষীদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন। দিবেন নতুন নিয়োগ, প্রতিষ্ঠা করবেন ন্যায় বিচার, ফিরিয়ে আনবেন এ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা।
উল্লেখ্য গত জুলাই মাসের ২৯ তারিখে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার শতবর্ষপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদের নিয়োগ পরীক্ষা জামালপুর লাইট হাউজ স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হয়।
চলবে…