রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততা’য় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ৪ জনসহ ৭ জনকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১-এর অভিযানে বুধবার (৫ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে হোসাইন আহম্মদ (৩৩), মো. নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪), বণি আমিন (২৭) এবং নিরুদ্দেশ চার তরুণ ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), মো. হাসিবুল ইসলাম (২০), রোমান শিকদার (২৪), মো. সাবিতকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে নব্য জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সংবলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহাজ), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদের’ চার কপি, জিহাদি উগ্রবাদ ভিডিও সংবলিত একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। র্যাব তাকে পরিবারের হেফাজতে রেখে বাকি নিখোঁজ ৭ সদস্য ও জড়িত অন্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।
র্যাব আরও জানায়, গত ২৩ আগস্ট নিলয়সহ নিখোঁজ ৫ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসে। পরে সোহেলের নির্দেশে তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেল ক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকায় যায়। নিলয়, সামি ও নিহাল ভুলবশত চাঁদপুর শহর এলাকায় চলে যায়। পরে রাতে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান করলে সেখানকার পুলিশ তাদের সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরে পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রাখে এবং পরদিন বাসায় চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা রাতে সেখান থেকে পালিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় গেলে সোহেল ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে আগে থেকেই বাকি তিনজন অবস্থান করছিল।
পরে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদ্রাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধানে এক দিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসে এবং নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত ১ ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে পটুয়াখালীর একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠায়।
পটুয়াখালীতে গ্রেফতার বণি আমিন নিলয়কে নিয়ে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় নিয়ে যায় এবং গ্রেফতার হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। বণি আমিন নিলয়কে তিন দিন তার বাসায় রাখে। তার বাসায় অতিথি আসায় নিলয়কে হুসাইনের মাদ্রাসায় রেখে আসে। নিলয় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফেরে।
নিলয়ের দেওয়া তথ্যমতে বণি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে বণি আমিনের তথ্যমতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা থেকে নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়েরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গ্রেফতার হাসিব ও রিফাত এক বছর আগে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা পায়। পরে হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হাঞ্জালার কাছে নিয়ে যায়। ফাহিম তাদের কুমিল্লার বিভিন্ন মসজিদে নিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করত ও ভিডিও দেখাত।
এভাবে তাদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। গ্রেফতার রোমান স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য চার দিন আগে নিরুদ্দেশ হয় এবং গ্রেফতার সাবিত দুই মাস আগে পটুয়াখালী থেকে নিখোঁজ হয়।
র্যাব জানায়, সোহেল নামক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের বিভিন্ন সেইফ হাউসে রেখে পটুয়াখালী এলাকার সিরাজ ওরফে রবি নামক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সারা দেশে ঘুরে ঘুরে তারা প্রশিক্ষণ নিতো।