সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মামলার রায় যত দ্রুত সম্ভব দিতে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মামলার রায় যত দ্রুত দেওয়া যাবে অপরাধ প্রবণতা তত কমবে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।
আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৫৯তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন সরকার তা করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিচারকদের জন্য আন্তর্জাতিকমানের জুডিশিয়াল একাডেমি করার ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া বিচার বিভাগের উন্নতির জন্য তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
বিগত সরকারগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশটাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, মনে হচ্ছিল এটি পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। মানুষের কাছে ভিক্ষা চেয়ে চলার অবস্থায় চলে গিয়েছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে আইনের শাসন নিশ্চিত করবো বলেছিলাম। আমরা নিজেরাই তো ভুক্তভোগী। বিচার পাাওয়ার অধিকারটুকুই আমরা হারিয়েছিলাম।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে দেশের পাশাপাশি অনেক বিদেশি শক্তির বাধার মুখেও পড়েন বলে জানান শেখ হাসিনা। বড় বড় দেশের সরকারপ্রধানেরা সরাসরি ফোন দিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের বলেছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের বিচার এখনও চলছে। তাহলে বাংলাদেশে হবে না কেন? লাখো মানুষের ওপর বর্বর অত্যাচারের বিচার করতে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় সচেষ্ট ছিল। তার দৃষ্টান্ত আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন।
বিচারকদের সুরক্ষায় সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারকরা রায় দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় নানাভাবে আক্রমণের শিকার হতে পারেন। সেজন্য আমরা বিচারকদের নিরাপত্তা জোরদার করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, আমার মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছে, তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিচার হবে না কেন? এই ধরনের চাপ কিন্তু সবসময়ই ছিল। কিন্তু তারপরও আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যারা এই বিচারগুলো করে যাচ্ছেন আমি তাদের কেউ অভিনন্দন জানায় এই সাহসী ভূমিকার জন্য।
নানামুখী চাপ থাকলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে সরকার উল্লেখ্য শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না, সেই আইনও হয়েছিল এ দেশে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে জাতির পিতা হত্যার বিচার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। অথচ ১৫ আগস্ট আপনজন হারানোদের মানবাধিকার নিয়ে কেউ ভাবেনি কখনো।
বিচারকরাও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন জানিয়ে তিনি ঝালকাাঠি ও গাজীপুরে বিচারকের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের বিচার যারা করবেন তাদের নিরাপত্তায়, তাদের কাজ করার একটা সুন্দর পরিবেশ যাতে হয় সেদিকে সরকারের বিশেষভাবে দৃষ্টি আছে। কারণ আমরা চাই যারা বিচার করবেন এবং যারা বিচার চাইতে সকলেই যেন সুস্থ একটা পরিবেশ পায়। ভালোভাবে থাকলে, ভালো পরিবেশ পেলে পরে চিন্তা করারও একটা ভালো সুযোগ হয়। কাজেই একটা সঠিক চিন্তা করেই কিন্তু বিচারটা করতে হয়। এটা একটা কঠিন কাজ। কাজেই সেই কাজটা যেন সহজভাবে হয় তার ব্যবস্থা করা এটা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ৮ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।