বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন

রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান আর নেই

ভিশন বাংলা ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
  • ২৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই।

 

সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. রাসেল এ কথা জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিরাজুল আলম খান। গতকাল রাত থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

 

সিরাজুল আলম খানকে ২০ মে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে নেওয়া হয় আইসিইউতে। দিন দিন তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। এরপর গতকাল রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

 

তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন

বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্যপুরুষ ও বাঙালির ‘জাতি রাষ্ট্র’ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে গঠিত গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’-এর প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গঠন এবং ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি।

মেধাবী ছাত্র সিরাজুল আলম খান নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়ার পর চলে যান বাবার কর্মস্থল খুলনায়। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন।

তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিদিন রাত করে হলে ফেরার কারণে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন।
দেশে-বিদেশে ‘রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান প্রথম মিছিলে যান স্কুলের ছাত্র থাকাকালে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়।

পরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাঙালিদের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যেয়ে নিউক্লিয়াস গড়ে ওঠে তিনিই ছিলেন সেটির মূল উদ্যোক্তা। তারপর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি। ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন অকৃতদার এই বিপ্লবী।
আর্থ-সামাজিক বিশেষণে সিরাজুল আলম খানের তাত্ত্বিক উদ্ভাবন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়। মার্কসীয় ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’-এর আলোকে বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেলজীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। এতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর গড়ে উঠে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ও দক্ষতা। যে কারণে তিনি ১৯৯৬-৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
শেষ জীবনের অধিকাংশ সময় আমেরিকাসহ বিদেশে কাটিয়েছেন সিরাজুল আলম খান। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর গবেষণা করে ও গ্রন্থ লিখে সময় কাটান। বছরের যে সামান্য সময় বাংলাদেশে বেড়াতে আসতেন, তার অধিকাংশই ব্যয় করেন পাঁচতারা হোটেলে সাবেক ‘বিপ্লবী’ পরিবেষ্টিত হয়ে আড্ডা দিয়ে। এ সময় গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com