শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে ইরানি তেল কেনায় চীনের রেকর্ড

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে ইরানি তেল কেনায় চীনের রেকর্ড

বাণিজ্য ডেস্ক: ইরানের কাছ থেকে চীনের জ্বালানি তেল কেনা রেকর্ড পর্যায়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরানের তেল উৎপাদন বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে চীনের কাছে তেল বিক্রি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস বাহিনীর হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছেন। ফিলিস্তিনের হামাস দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে—এটাই অভিযোগ। তবে ইরান হামাস বাহিনীর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে।

এ পরিস্থিতিতে ইরানের তেল ব্যবসার লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেটা হলো, বিশ্বের যেসব বন্দর ও পরিশোধনাগার ইরানের তেল প্রক্রিয়াজাত করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে।

বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারী দেশ হচ্ছে চীন। বছরের প্রথম ১০ মাসে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে চীন ইরানের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ১০ লাখ ৫ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। তারাই ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। ২০১৭ সালে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসার আগের সময়ের চেয়ে যা ৬০ শতাংশ বেশি।

চলতি বছর তেহরান তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বড় ধরনের ছাড়ে তেল বিক্রি করছে। সে জন্যও ইরানের কাছ থেকে চীনের তেল কেনা বেড়েছে।

অক্টোবরে ইরানের দৈনিক তেল উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল। রয়টার্সের এক জরিপে জানা গেছে, ২০১৮ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ।

এদিকে জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ভরটেক্সার তথ্যানুসারে, অক্টোবরে ইরান থেকে চীন দৈনিক গড়ে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। মাসিক ভিত্তিতে দেখা যায়, চীন কখনোই ইরানের কাছ থেকে আগে এতটা তেল কেনেনি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, চীন কীভাবে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দুই কার্গো তেল কেনা ছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের পর চীন ইরানের

কাছ থেকে আর কোনো তেল কেনেনি বলে কাগজপত্রে দেখা যায়। তবে ইরানের যত তেল চীনে প্রবেশ করে, তার প্রায় সবই মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে বলে দেখানো হয়।

নামগোত্রহীন ডার্ক ফ্লিটে এসব তেলে পরিবহন করা হয়। ইরানের বন্দর থেকে তেল ভরার সময় তাদের যেন চিহ্নিত করা না যায়, সে জন্য তারা ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রাখে।

এ ছাড়া এসব জাহাজ নিজেদের অবস্থান লুকিয়ে বা নির্ধারিত স্থানের বাইরে আরেক জাহাজে তেল তুলে দেয় বা এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও তেল পরিবহন করে। সে জন্য অনেক দেশের মধ্যেই সংশয়, পাছে যেন দূষণ না হয়।

চীন ইরান থেকে যত তেল কেনে, তার ৯৫ শতাংশই যায় সব ছোট ছোট তেল পরিশোধনাগারগুলোতে। ইরানের তেল বিশ্ববাজারের চেয়ে ব্যারেলপ্রতি ১০-১২ ডলার ছাড়ে পাওয়া যায়, যেখানে রাশিয়ার তেলে ছাড় পাওয়া পায় ব্যারেলে পাঁচ ডলার। নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে বাঁচতে চীনের এই ছোট পরিশোধনাগারগুলো চীনা মুদ্রায় লেনদেন করে, ডলারে নয়। এ কৌশলের মধ্য দিয়ে ইরান নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল কেনাবেচা করতে পারছে।

এ ছাড়া চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকেও তেল কেনে। তাদের অবস্থান হলো, কোনো দেশ আরেক দেশের ওপর একপাক্ষিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটা তারা মানবে না।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের পর থেকে ইরানের পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৮০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, চলাচল নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ৪০টি জাহাজে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com