সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
উপজেলার ছোট খাতাটি বাঁধের বেশ কিছু স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। তিস্তাপারের চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার ৫০০ মানুষ। আগাম শীতকালীন সবজি, বোরো ফসলের ক্ষেত ও চলাচলের সড়কসহ তলিয়ে গেছে মাছের পুকুর-খামার। অনেকে গবাদিপশু নিয়েও নিদারুন বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার ফলে উপজেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে রোববার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এর আগে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে, বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ১০টা পর্যন্ত পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
বাইশ পুকুর এলাকার বাসার বলেন, শনিবার রাত ১১টার পর তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় আমাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। এরকম পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত্রিযাপন করেছেন।
ছোটখাতা এলাকার মাজেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে বাঁধ ধসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ সংস্কার না করলে ভাঙন আরো বড় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
১০ নম্বর পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই মৌজার ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৩শ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
৭ নম্বর খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, বাইশ পুকুর এলাকায় চার শতাধিক বাড়িঘরের পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেইসঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও আবাদি বিভিন্ন ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টার দিকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
ডিমলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আব্দুস সবুর মিয়া বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ডিমলা উপজেলায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রংপুর বিভাগসহ দেশের বেশিভাগ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, তিস্তার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দেখভাল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।