শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠে গতকাল শুক্রবার সকালে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর মূল আকর্ষণ ‘কুমারীপূজার’ আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন মণ্ডপেও একই আয়োজন ছিল। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। এবার কুমারীপূজায় ছিল ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়।
আজ শনিবার মহানবমী পূজা।
পূজার আয়োজকরা জানান, রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে অষ্টমী পূজা শুরু এবং ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে সন্ধীপূজা শেষ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় কুমারীপূজা শুরু এবং দুপুর ১টায় শেষ হয়। এবারের মাতৃরূপী দেবী দুর্গার শাস্ত্রীয় নাম পূঞ্জিকা, আর জীবন্ত রূপের নাম সংহিতা ভট্টাচার্য।
বয়স আট বছর। দুর্গাপূজার পঞ্চম তিথিতে তার জন্ম। তাকে ভোরে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। এরপর সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়।
পরে তাকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে (১৬ উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়।
এ সময় চারদিকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি ও দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে। পূজা চলাকালে ওই কুমারী ভক্তদের আশীর্বাদ করেছে।
পূজার কার্যক্রম শেষে কুমারী মায়ের নাম জানান এবারের পূজার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বামী হরিপ্রেমানন্দ (স্বপন মহারাজ)। তিনি বলেন, দেবী দুর্গাকে সম্মান জানাতেই অষ্টমীতে আয়োজন করা হয় কুমারীপূজার।
কুমারীপূজার ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত। এর মাধ্যমে নারীজাতির প্রতি সবাই শ্রদ্ধাশীল হবে।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এদিন ছিল হাজার অনুরাগীর ঢল। পূজামণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো প্রাঙ্গণ। রাজধানীর নারিন্দা থেকে কুমারীপূজায় আসা তৃতীয় শ্রেণির অপর্ণা দেবনাথ বলে, ‘কুমারীপূজায় কুমারী রূপে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়। আমি প্রতিবছর কুমারীপূজায় আসি। এবারও মা-বাবার সঙ্গে ভোরবেলা এসেছি।’
মহাষ্টমীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কুমারীপূজা। সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই দেবী দর্শনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকালে অষ্টমী পূজার পুষ্পাঞ্জলি শুরু হলে ভিড় বাড়তে থাকে। ফুলে-ফলে ভরে যায় মন্দির চত্বর। বাহারি সজ্জায় সাজানো হয়েছে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ। পুরো মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ, আনসারসহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
ঢাকেশ্বরী ছাড়াও রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, শাঁখারীবাজার পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে নানা অনুষ্ঠানের কারণে সারা দিনই ভক্ত-দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল। সন্ধ্যা আরতিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
আজ মহানবমী
পঞ্জিকানুযায়ী আজ মহানবমী পূজা। সকাল ৭টা ৪১ মিনিটে মহানবমী শুরু ও ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ হবে। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এদিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়।