শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
বদিউজ্জামান রাজাবাবু চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সুযোগে মাদক বিক্রেতারা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে দেদারসে। অনেকটা খোলামেলাভাবেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণেই বেড়েছে মাদকের বিস্তার।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। হেরোইন পাচারের অন্যতম রুট চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
প্রতিবেশী দেশ থেকে অবাধে ঢুকছে হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নদীপথে বড় বড় চালান আনার পর ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। এভাবে মাদকের রমরমা কারবার চললেও, ঝিমিয়ে পড়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। আর এর প্রভাব পড়েছে মাদক জব্দ ও মামলায়। কমছে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা। মাদক উদ্ধারকারী সংস্থার সদস্যরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে মাদক পাচার নতুন ঘটনা নয়। সীমান্ত পথে মাদক এসে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সব প্রান্তে।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কমেছে মাদক জব্দ ও আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা। গত ৫ই আগস্ট বিক্ষুব্ধ মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জেও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে পুলিশি ব্যবস্থা। সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা। জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ থানায় মাদকের মামলা হয়েছে ৯৯টি, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫৬জন মাদক কারবারি। মে মাসে ৭৬ মামলায় গ্রেপ্তার ১০৮, জুন মাসে ৭৭ মামলায় গ্রেপ্তার ১০৫, জুলাই মাসে ৮৮ মামলায় গ্রেপ্তার ১১১ জন। গণঅভ্যুত্থানের পরের দুই মাসে মামলা ও গ্রেপ্তারে ছন্দপতন ঘটে। আগস্ট মাসে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ২৯টি; গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৭ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩ মামলায় গ্রেপ্তার ৩৮ জন। তথ্যমতে, প্রতি মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্তত ৭০-১০০টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়, সেখানে গত দুই মাসে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মামলা হয়েছে অর্ধেকের কম। গ্রেপ্তারও কমেছে।
গণঅভ্যুত্থানের আগের দুই মাসে (জুন-জুলাই) হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ১৪ কেজি’র বেশি। গণঅভ্যুত্থানের পরের দুই মাসে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) হেরোইন উদ্ধার হয়েছে দেড় কেজি’রও কম। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। এরপর থেকেই মাঠপর্যায়ে আগের মতো সক্রিয় হতে পারেনি পুলিশ। এই সুযোগে অবাধে চলছে মাদকের কারবার। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে যেভাবেই হোক ভারত থেকে মাদক আসা বন্ধ করতে হবে। না হলে অনেক তরুণ বিপথগামী হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশ একটা ট্রমার মধ্যে ছিল। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সব ইউনিট সক্রিয় হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই আমরা মাদকের বিরুদ্ধে পুরো উদ্যমে কাজ শুরু করবো।