শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীলফামারী:
১৬ এপ্রিল ২০২৫, রাত আনুমানিক ১২টা থেকে ১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে সংঘটিত এক চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সাংবাদিক সমাজ। জাতীয় সাপ্তাহিক তদন্ত বিচিত্রা পত্রিকার নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি মোসলেম উদ্দিন খোকনের ব্যবহৃত Suzuki Gixxer SF FI ABS মোটরসাইকেলটি ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে তাঁর অফিসের সামনে থেকে চুরি হয়ে যায়।
চুরি যাওয়া গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর ১২৯৪০৬ এবং চেসিস নম্বর ১২৫৬৪৯। অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ হিসেবে পরিচিত একটি এলাকা থেকে এভাবে মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়ায় কেবল সাংবাদিক মহলই নয়, গোটা জেলাজুড়েই উদ্বেগ এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনার বিবরণ ও পুলিশের নির্লিপ্ততা
মোসলেম উদ্দিন খোকন জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো তাঁর অফিসের বাইরে গাড়িটি রেখে কাজ করছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সেটি চুরি করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের বাইক চুরি হওয়া দেখে মনে হচ্ছে, আমরা আইন-শৃঙ্খলার নামে একধরনের নৈরাজ্যের মধ্যে বাস করছি।”
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া
নীলফামারী প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেই উল্লেখ করছেন। প্রেসক্লাবের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি আগে কখনও দেখিনি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ, তা সহজেই অনুমেয়।”
তিনি আরও বলেন, “চোরচক্রের হাতে প্রশাসন জিম্মি হয়ে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। পুলিশ যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ক্লু উদ্ধার না করতে পারে, তবে এটা ব্যর্থতা নয়, চরম উদাসীনতা।”
সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবনতি
শুধু নীলফামারীতেই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধের হার বেড়ে যাওয়ায় জনমনে তীব্র উদ্বেগ বিরাজ করছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশালের মতো শহরগুলোতেও মোটরসাইকেল চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ এবং শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কালে দেশে ৩,২০০টির বেশি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে অধিকাংশ ঘটনায় পুলিশ ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি।
অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তানভীর সিদ্দিকী বলেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা , ও অপরাধীদের সঙ্গে দুর্বৃত্ত আঁতাত—এসবই দেশের আইনশৃঙ্খলার বেহাল দশার মূল কারণ।”
এই ঘটনায় স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, “দেশে এখন মনে হচ্ছে, যার যা খুশি, তাই করার স্বাধীনতা আছে। আইনশৃঙ্খলা শুধু নামেই আছে, বাস্তবে নয়।”
সাংবাদিকদের প্রতি হুমকি ও প্রতিশোধের আশঙ্কা
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি হয়তো শুধুমাত্র চুরির ঘটনা নয়; বরং মোসলেম উদ্দিন খোকনের সাংবাদিকতা, বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী রিপোর্টের কারণে পরিকল্পিতভাবে প্রতিশোধমূলক ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি নিজেও বলেন, “আমি বিগত বছরগুলোতে অনেক প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি উন্মোচন করেছি। এই ঘটনার পেছনে তাদের হাত থাকতে পারে বলেই আমি মনে করি।”
ভবিষ্যৎ করণীয় ও দাবিসমূহ
সাংবাদিক সমাজ, সচেতন নাগরিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপিত হয়েছে:
১. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চুরি হওয়া বাইক উদ্ধারে কার্যকর অভিযান।
২. স্থানীয় চোরচক্র ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান।
৩. সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা উদ্যোগ।
৪. দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পুনর্গঠনমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ।