শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
মোঃ শফিকুল ইসলাম (শফিক), বিশেষ প্রতিনিধি:
রাখাইন বর্ষবরণ উপলক্ষে পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব, রাখাইন ভাষায় যাকে বলা হয় ‘সাংগ্রাই’। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় কুয়াকাটার কেরানীপাড়া রাখাইন মহিলা মার্কেট মাঠে পুরাতন বছর ১৩৮৬ সালকে বিদায় এবং নতুন বছর ১৩৮৭ সালকে বরণ করে নিতে এই উৎসবের সূচনা হয়।
উৎসবের সূচনা হয় প্রথমে ফিলিস্তিনের জন্য নিরবতা পালনের মাধ্যমে, যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে একটি মানবিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় মূল উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
এ সময় রাখাইন তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষ উৎসবে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। রাখাইন তরুণীদের মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। এরপর তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে ভালোবাসার জল ছিটিয়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক এই উৎসব উদযাপন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমং তালুকদার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান, মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির, কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ড. শহিদুল ইসলাম শাহীন এবং কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অনেকে।
রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ জানান, পুরোনো বছরের গ্লানি ও দুঃখ জলকেলির মাধ্যমে ধুয়ে ফেলে নতুন বছরের জন্য শুদ্ধতা ও আনন্দ কামনাই এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। তিন দিনব্যাপী চলবে এই উৎসব। এ সময় রাখাইন পরিবারগুলোতে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না করা হয়, যা উৎসবকে আরও বর্ণিল করে তোলে।
রাখাইন তরুণী ইয়াংসা বলেন, “নতুন বর্ষকে বিদায় ও বরণ করার এটি একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসবের রীতি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, “রাখাইনদের তিন দিনের জলকেলি উৎসব যেন সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা কাজ করছে। এই জলকেলি উৎসব রাখাইনদের হলেও এটি এখন এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এজন্য প্রতিটি প্যান্ডেলে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।”
এই উৎসব শুধু রাখাইন জনগোষ্ঠীর নয়, এটি এখন পুরো উপজেলার মানুষদের একটি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন রাখাইনরা।