মঙ্গলবার, ২৯ Jul ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মেধাবী মুখগুলোর উজ্জ্বল হাসি আর করতালিতে মুখর ছিল পবা উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষ। উপলক্ষ, সেরাদের স্বীকৃতি প্রদান। পড়াশোনায় ধারাবাহিক সাফল্য এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য রাজশাহীর পবা উপজেলার ৩৮ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা, সম্মাননা ক্রেস্ট ও আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি) এর আওতায় পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই) স্কিমের অধীনে এই অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ২০২২ ও ২০২৩ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ তুলে দেওয়া হয়। শুধু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিই নয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহ জোগাতে দেওয়া হয়েছে আর্থিক অনুদানও। এই অনুদানের অর্থ ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি পর্যায়ের কৃতী শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা এবং এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহা. আবদুর রশিদ। নজীবর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিপাশা খাতুন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোতাহার হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-পরিচালক মোহা. আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই গ্রান্ট কেবল অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি জাতির প্রত্যাশার প্রতীক। যারা এই পুরস্কার পেয়েছে, তারা মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এরাই আগামীর বাংলাদেশকে পথ দেখাবে, ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিবিজিএসআই স্কিমের আওতায় শুধু শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে না বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং গুণগতভাবে উন্নত পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও অনুদান প্রদান করা হচ্ছে, যা দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘এ ধরনের সম্মাননা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, এটি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। আমরা চাই পবা উপজেলা রাজশাহীর মধ্যে একটি মডেল শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। এই মেধাবীরাই সেই যাত্রার পথিকৃৎ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই স্বীকৃতি অন্য শিক্ষার্থীদেরও ভালো ফলাফলে উৎসাহিত করবে এবং ঝরে পড়ার হার কমাতে সহায়ক হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোতাহার হোসেন বলেন, ‘এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য শুধু শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান নয়, বরং তাদের কৃতিত্বকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রাণিত করা। এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও গুণগত মানোন্নয়নের একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
নওহাটা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুদ্দিন প্রামাণিক শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী আজ এই পুরস্কার পাচ্ছে, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এটা কেবল একটি পুরস্কার নয়, এটা মেধাবীদের যথাযথ স্বীকৃতি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হবে। আমি আশা করি, এই সাফল্য দেখে অন্য শিক্ষার্থীরাও উৎসাহিত হবে।’
হরিয়ান ইউনিয়নের কৃতি শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিনের বাবা জালাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের সাফল্যের এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে আমি একজন গর্বিত বাবা। আমরা গ্রামে থাকি, কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাই। সরকারের এই উদ্যোগ আমাদের মতো অভিভাবকদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। আমার মেয়ে এই পুরস্কার পেয়ে শুধু আর্থিকভাবেই উপকৃত হয়নি, মানসিকভাবেও অনেক শক্তিশালী হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’ তাঁর কথায় ফুটে ওঠে প্রান্তিক পর্যায় থেকে উঠে আসা মেধাবীদের জন্য এ ধরনের কর্মসূচির গুরুত্ব।
রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী কবির সরকার তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘শিক্ষায় জাতির মেরুদন্ড। এই পুরস্কার আমার দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের স্বীকৃতি। যখন সরকারের পক্ষ থেকে এমন সম্মাননা পাওয়া যায়, তখন দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। এই সম্মান আমাকে সামনে আরও ভালো কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।’ তার চোখেমুখে ছিল আত্মবিশ্বাস আর কৃতজ্ঞতার ছাপ।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, প্রচলিত উপবৃত্তির বাইরেও কৃতিত্বের ভিত্তিতে আর্থিক পুরস্কার প্রদানের এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তুলবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। এটি পবা উপজেলার শিক্ষা ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউআইটিআরসিই সহকারী প্রোগ্রামার মোসা. ইসমোতারা খাতুন, রামচন্দ্রপুর কলেজের অধ্যক্ষ তরিকুল আলম, একাডেমিক সুপার ভাইজার আয়েশা নাজনীন, সংবর্ধিত শিক্ষার্থী, তাদের গর্বিত অভিভাবক, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, মাদ্রাসা সুপার এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিক এবং দপ্তরের কমকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।