বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১২ বছরের অনন্য অর্জন উদযাপন করল জেনিথ ইসলামী লাইফ প্রথাগত অভিজ্ঞতা বদলে দেশে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবা দুর্গাপুরে আষাঢ়ে বৃষ্টিতে রোপা আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষক কৃষানীরা  লালমনিরহাটে প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার, ট্রাক উদ্ধার লালমনিরহাটে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছের চারা বিতরণ অনুষ্ঠিত মিথ্যা মামলা ও বাড়ি দখলের প্রতিবাদে নির্যাতিত মায়ের সংবাদ সম্মেলন গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে চারঘাটে মানববন্ধন লালমনিরহাট সীমান্তে ১৫ বিজিবি’র অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজা জব্দ একুশে পদকপ্রাপ্ত পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী আর নেই শ্রীবরদীতে ইউপি সদস্য লাভলুর বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
প্রথাগত অভিজ্ঞতা বদলে দেশে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবা

প্রথাগত অভিজ্ঞতা বদলে দেশে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবা

ডেস্ক রিপোর্ট: ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে পরিবর্তন এসেছে দেশের ইন্স্যুরেন্স সেক্টরেও।  যেখানে ব্যাংকিং, টেলিযোগাযোগ, এমনকি খুচরা ব্যবসা খাতও অনেক আগেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা দিয়ে আসছে, সেখানে ইন্স্যুরেন্স খাত দীর্ঘদিন ধরেই পুরানো ধ্যান-ধারণা ও কাগজ-নির্ভর প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে ছিল।

তবে, বর্তমানে এ চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। ডিজিটাল রূপান্তরকে এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই কৌশলগত বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখছে। বাজারে নিজেদের জায়গা আরো পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে এখন কাগজ থেকে সকল কার্যক্রম ডিজিটাল এর মাধ্যমে রূপান্তর করার দিকে ঝুঁকছে। দেশের ইন্স্যুরেন্স খাতে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রূপান্তরমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে।

দেশে ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের এই ডিজিটাল যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের হাত ধরে। ২০১৮ সালে এ প্রতিষ্ঠান দু’টি দেশে প্রথমবারের মত ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স প্ল্যাটফর্ম চালু করে। বাংলাদেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে গার্ডিয়ান ডিজিটাল সেবা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ইন্স্যুরেন্স সেবার প্রথাগত অভিজ্ঞতা বদলে দিয়ে নতুনভাবে এ সেবার পরিচিতি তৈরি করে।

প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনের গ্রাহকের জন্য সহজবোধ্য মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব ইন্টারফেস চালু করে। যার মাধ্যমে গ্রাহকেরা সহজেই হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে পলিসি কেনা ও প্রিমিয়াম পরিশোধসহ তাৎক্ষণিক পলিসি প্রদান ইত্যাদি কাজ করতে পারেন কোন প্রকার কাগজপত্র বা ইন্স্যুরেন্স অফিসে সরাসরি যাওয়া ছাড়াই। তাদের কার্যকর এ পদক্ষেপের ফলে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকেরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করতে পারছেন।

তবে, উল্লেখযোগ্য এ উদ্যোগ সত্ত্বেও এখনও দেশের ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে ডিজিটাল প্রসার বেশ সীমিত। দেশের জিডিপিতে এই সেক্টর মাত্র ০.৪ থেকে ০.৫ শতাংশ অবদান রাখে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশেরও কম মানুষের ইন্স্যুরেন্স পলিসি আছে। এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে, দেশের মানুষের ডিজিটাল মাধ্যম নিয়ে সচেতনতার অভাব, প্রযুক্তি ব্যবহারে অদক্ষতা, অনলাইনে  আর্থিক লেনদেনের প্রতি অবিশ্বাস ও আস্থার ঘাটতি। আর এসব বাস্তবতা এ খাতের প্রসারে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আশার কথা হল, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলাতে শুরু করেছে। গার্ডিয়ানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেখিয়েছে যে, ডিজিটাল সেবা প্রদানের মাধ্যমে কীভাবে গ্রাহকদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখা যায়; স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে সেবা নিশ্চিত করা, সেই সাথে সঠিকভাবে কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়।

বর্তমানে হাতে গোনা কেবল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবা দিচ্ছে। তবে, গার্ডিয়ান তাদের ডিজিটাল সেবা মাধ্যম গুলোর প্রতিনিয়ত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে এখনও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। বিমাফাই, কার্নিভাল অ্যাস্যুরেন্স, সুখী ইত্যাদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গ্রাহকদের একক ডিজিটাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির ইন্স্যুরেন্স পলিসির মধ্যে তুলনা ও ক্রয় করার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে, এখনও অনেক ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সেবা শুধুমাত্র অনলাইন পেমেন্ট বা রেকর্ড সংরক্ষণের মতো মৌলিক কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ; পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সেবায় পরিণত হয়নি।

এই পরিবর্তনের ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বেশ কিছু অগ্রগতিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো ‘রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স।’  এটি স্টার্টআপ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইনস্যুরেন্স  কোম্পানিগুলোর মধ্যে নতুন ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স প্রোডাক্ট পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। ফলে, ঝুঁকি কম থাকে এবং উদ্ভাবনী কাজগুলো উৎসাহিত হয়। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি কেন্দ্রীভূত, ইন্টারকানেক্টেড ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা, যেখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে মানসম্পন্ন ও কার্যকরী সেবাদান সম্ভব।

আরও কিছু মৌলিক পদ্ধতিগত সমস্যা এ  খাতের বিস্তারে বাধা হয়ে আছে। সারাদেশে ডিজিটাল ইনস্যুরেন্স সেবা বিস্তারের জন্য যেসব মৌলিক  চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা অপরিহার্য। শহরের মানুষের বাইরেও গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মাঝে প্রযুক্তিগত ও ডিজিটাল জ্ঞানের উন্নয়ন আবশ্যক। ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্ট ব্যবস্থাকে আরও সহজ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। সেই সাথে জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যেন মানুষ অনলাইনে ইন্স্যুরেন্স সেবার প্রতি আস্থা রাখতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী স্কেল-আপ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ, রিয়েল-টাইম পলিসি সার্ভিসিং সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড ফ্রড ম্যানেজমেন্ট টুলসের মত ডিজিটাল কাঠামোতেও বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।

দেশের ইন্স্যুরেন্স সেক্টরকে প্রথাগত থেকে ডিজিটাল করার প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতাও রয়েছে এক্ষেত্রে। এখন প্রয়োজন ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান ও এ খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার। ধীরে পরিবর্তনের বদলে তারা আরও সাহসী উদ্যোগ নিলে উন্নয়ন আরও দ্রুত আসবে। দেশের মানুষের মধ্যে যদি ইন্স্যুরেন্স নিয়ে আস্থা তৈরি হয় এবং উদ্ভাবনের নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়, তবে এ সেবা খাত থেকে দেশের অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com