বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খেলনা শিল্পকে রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসেবে গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক খেলনা শিল্পের বাজার বর্তমানে ১০২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অথচ বাংলাদেশে এখাতের রপ্তানি মাত্র ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫.২৩ মিলিয়ন ডলার যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলেও বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও নগণ্য। তিনি অভিযোগ করেন, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কহার, বন্ডেড সুবিধার অনুপস্থিতি, টেস্টিং সুবিধার ঘাটতি, অবকাঠামো দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার সীমিত থাকার কারণে এ শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ২৫০টি সরাসরি খেলনা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এবং প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের অভ্যন্তরীণ খেলনা বাজারের আকার বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা হলেও রপ্তানি খাতে সম্ভাবনার তুলনায় অর্জন খুবই কম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস: পলিসি ও আইসিটি) মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর শুধু তৈরি পোশাক নয়, বিকল্প খাতেও নজর দেওয়া জরুরি। রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে ট্যারিফ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে এবং বন্ডেড সুবিধা প্রদানে কাজ করছে। তবে বাজেটের বাইরে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন কোনো নীতি সহায়তা দেওয়া কঠিন। আগামী বাজেটে খেলনা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা বিবেচনা করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, উদ্যোক্তাদের শুধু প্রণোদনার দিকে না তাকিয়ে নিজেদের সক্ষমতা ও পণ্যের মানোন্নয়নে জোর দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন খেলনা শিল্পকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ব্রিটিশ সরকার এখাতে সহযোগিতায় আগ্রহী। তিনি জানান, “রুলস অব অরিজিন” সহজীকরণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হবে। নীতিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে ব্রিটেনে খেলনা রপ্তানি বহুগুণ বাড়তে পারে।
উদ্যোক্তা ও প্রতিনিধিদের মতামত:
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেলনা ও প্লাস্টিক সামগ্রীর রপ্তানি ছিল ২৭৬ মিলিয়ন ডলার। তবে গবেষণা, নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো ঘাটতির কারণে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। তিনি খেলনা শিল্পের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন, ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট, মানবসম্পদ প্রশিক্ষণ ও যৌথ বিনিয়োগ উৎসাহিত করার প্রস্তাব দেন।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে গোল্ডেন সন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ বলেন, খেলনা শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় উদ্যোক্তারা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাপকেক এক্সপোর্টার্স লিমিটেডের এমডি ইয়াসির ওবায়েদ সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ ও মেধাস্বত্ব সুরক্ষার উপর জোর দেন। হ্যাসি টাইগার কোম্পানির জিএম মুসা বিন তারেক বলেন, কাঁচামালে উচ্চ শুল্ক আরোপ ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্লাস্টিক খাতের জন্য সবুজ ও হলুদ ক্যাটাগরীতে নবায়ন যথাক্রমে ৫ ও ২ বছরের জন্য মওকুফ করা হয়েছে। তবে খেলনা শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য জ্বালানি, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের পরিচালক ড. অশোক কুমার রায় বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে পণ্যের নকশা নকল না করে নিজস্ব উদ্ভাবন, পেটেন্ট ও ট্রেডমার্কে জোর দিতে হবে।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ সংগঠনের পরিচালকবৃন্দ, সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।