সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: একটি গোল করেই আর্জেন্টাইনদের নয়নের মণি ক্লদিও ক্যানিজিয়া! ’৯০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ক্যানি’র স্মরণীয় গোল। শেষ ষোলোর ম্যাচে ব্রাজিল খেলছে একচেটিয়া। হঠাৎ মাঝমাঠে বল ম্যারাডোনার পায়ে, সেখানে পাঁচ ব্রাজিলিয়ানের বিপরীতে মাত্র দুই আর্জেন্টাইন। ঘিরে ধরা তিনজনকে ফাঁকি দিয়ে ম্যারাডোনা বল করে দিয়েছেন, এরপর ক্যানিজিয়া বল পাঠিয়ে দিলেন ব্রাজিলের জালে। অবিশ্বাস্য এক গোল! দারুণভাবে উদ্যাপিত এক গোল! ৩৫ বছরের বেশি বয়সী আর্জেন্টাইনরা এখনো এই গোলের স্মৃতি রোমন্থনে মজা পান। তাদের মধ্যে করা ‘দুর্দান্ত উদ্যাপিত পাঁচ গোলের’ জরিপে আছে ক্যানিজিয়ার এই স্মরণীয় গোলটি। সেই স্মৃতি উপভোগের পাশাপাশি ৫১ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন পেছন ফিরে দেখেন ’৯০ বিশ্বকাপকে ‘সেবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল ছিল সমস্যাজর্জর। ম্যারাডোনা, রুগেরি, বুরুচাগা ইনজুরি নিয়েই গিয়েছিল টুর্নামেন্টে। পম্পিদোর পা ভেঙে গিয়েছিল। কিছু খেলোয়াড় ট্রেনিংয়ে থাকলেও তবে বাকিদের ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলতে হতো। একাদশ বদলাতে হতো বারবার। ভয়ংকর অবস্থা!’ বাস্তবতা হলো, সেই দলটিই পৌঁছে গিয়েছিল ফাইনালে।
সেই দলের সঙ্গে কী মিল আছে এবারের দলের? একদম সেরকম ইনজুরি জর্জর অবস্থা না হলেও গোলরক্ষক রোমেরোর ইনজুরি খানিকটা ধাক্কা দিয়ে গেছে। কোচ হোর্হে সাম্পাওলির অধীনে এখনো দলের চেহারা ফেরেনি। ফেরেনি দলীয় আত্মবিশ্বাস। তবে ক্যানিজিয়ার চোখে ইতিবাচক হলো আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ, ‘আমাদের পক্ষে কি আছে? আমাদের আছে সেরা অ্যাটাকিং ফুটবলার, যারা ভয় ধরিয়ে দিতে পারে যেকোনো দলকে। তাদের নামে কাঁপে প্রতিপক্ষ। এই দলগুলো ভাবে না যে ‘হিগুয়াইন সমালোচিত হচ্ছে আর্জেন্টিনায়।’ তারা বিবেচনা করে ‘সে জুভেন্তাসের সেরা গোলদাতা।’ আমাদের দুর্বলতা হলো, ব্যাকলাইনটা সেরকম শক্তপোক্ত নয়। ডিফেন্সের দু-একটি জায়গায় উন্নতি করতে হবে।’ মেসি-আগুয়েরো জুটিই এবার রাঙাবে আর্জেন্টিনাকে। মেসির সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে আগুয়েরো ইংলিশ লিগের ফর্মটা বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন। গত দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে আট ম্যাচ খেলে এখনো গোলহীন ম্যানসিটির এই স্ট্রাইকার। তাই ফরোয়ার্ড লাইনে মেসির সঙ্গে তিনি কতটা সঙ্গত করতে পারবেন তার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। সেখানে হিগুয়াইন বিকল্প হলেও কি খুব ভরসা করা যায়!
ভরসার জায়গা, দায়িত্ব নেওয়ার জায়গায় গণ্ডগোল দেখছেন ক্যানিজিয়া। তিনি ’৯০ বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন লিওনেল মেসি বড় একা আর্জেন্টিনা দলে, ‘সতীর্থদের কাছ থেকে ম্যারাডোনা যেরকম সহযোগিতা পেয়েছিল, সেটা মেসি পায় না। এটা খুব সত্য।’ তাই আর্জেন্টিনা বার্সেলোনার মতো গোল সুফলা হয়ে উঠতে পারছে না। বার্সার সতীর্থরা তাঁকে দারুণ বোঝে, কখন কী করতে হয় জানে। সেটা জানে না জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা। নইলে গতবার এত কাছে গিয়েও মুঠো গলে বেরিয়ে যায় বিশ্বকাপ! হিগুয়াইন পোস্টের সামনে থেকে জালে পাঠাতে পারেননি বল। ক্যানিজিয়া তাই মেসিনির্ভরতা কাটিয়ে দলের সবাইকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আমি জানতাম ম্যারাডোনা ফুটবলের অনন্য প্রতিভা। এর পরও প্রত্যেক খেলোয়াড়ের দায়িত্ব আছে, এমনকি যে বেশি খেলার সুযোগ পায় না তারও। তাই বলি, সব দায়িত্ব মেসির কাঁধে চাপিয়ে দিলে তো হবে না। তখন প্রশ্ন আসে, আপনি তাহলে ওখানে কেন? একবার ভাবুন, ১৯৯০ সালে যদি ভাবতাম আমি একাই চ্যাম্পিয়ন দলকে টেনে নিয়ে যাব! এটা হয় না। আমরা একসঙ্গে টেনে নেব। আমি আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার এবং দলের অন্যদের সঙ্গে নিয়েই এগোব। এটা আমার দায়িত্ব।’ অর্থাৎ সবই মেসি করে দিতে পারবেন না। দলের অন্যদেরও অবদান রাখতে হবে। জ্বলে উঠতে হবে সঠিক সময়ে। ফিফা ডটকম