রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজ : ঢাকার মহাখালী এলাকায় গত ১৯ জুন গাড়িচাপায় সেলিম ব্যাপারী নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনার পরপরই তার পরিবার মামলা করে কাফরুল থানায়।
সেই মামলায় অভিযুক্ত করা হয় গাড়ির অজ্ঞাতনামা গাড়ির চালককে।
দুর্ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সরকারি একজন এমপির গাড়ি এক পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেছে- এমন অভিযোগও ওঠে যে, সংসদ সদস্যের ছেলে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
কাফরুল থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি নম্বরপ্লেট পেয়ে তার ভিত্তিতে তারা জানতে পারে গাড়িটির মালিক কামরুন্নাহার শিউলী। তিনি সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী এবং নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলায় অজ্ঞাতনামা চালককে অভিযুক্ত করা হলেও সংসদ সদস্যের ছেলে সাবাব চৌধুরী গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কিনা সেই অভিযোগও তারা খতিয়ে দেখছে।
এ দুর্ঘটনার নিয়ে প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কদিন ধরে চর্চার পর সোমবার জানা গেছে নিহত ব্যক্তির স্বজনরা টাকার বিনিময়ে আপসে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে।
নিহত সেলিম ব্যাপারীর স্বজনরা স্বীকার করেছেন, সংসদ সদস্য নিহতের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়ায় তারা মীমাংসা করছেন।
তবে এ ধরনের অপরাধের মামলা, যেখানে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এভাবে আদালতের বাইরে মীমাংসা করা যায় কিনা, এ নিয়ে আইনজীবীদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে, তাতে এখন মীমাংসার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষে আদালত পর্যন্ত যেতে হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, আমি যতদূর শুনেছি এবং জেনেছি মামলার ধারা হচ্ছে ২৬৯ আর ৩০৪। এই ধারায় মামলা হলে আপস করা যায় না। বাদীপক্ষ একটি দরখাস্ত দিয়েছেন, সেই দরখাস্তে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তারই ভুল হয়েছিল। তার কারণ তিনি রাস্তা দিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং তিনিই এই অ্যাকসিডেন্টটা ঘটিয়েছেন। সে কারণে তারা আপস করার পক্ষে।
কিন্তু আইনমন্ত্রী বলেছেন, যতই দরখাস্ত দেয়া হোক না কেন, যেহেতু এটা অমীমাংসাযোগ্য মামলা, সে কারণে এটা সম্পূর্ণ তদন্ত হবে। এবং তদন্তে প্রমাণাদিসহ যে তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে পুলিশ প্রতিবেদন দেবে, এবং এটার বিচার হবে আদালতে।
ফৌজদারি আইনের একজন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী রোজী সবুর বলেছেন, এ ধরনের মামলায় সাক্ষী পাওয়া কঠিন হয়,তারপরও আপস করার সুযোগ আইনে নেই।
দুর্ঘটনায় নিহত সেলিম ব্যাপারীর ভগ্নীপতি আবদুল আলিম জানান, সংসদ সদস্য নিজে তাদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারের দায়িত্ব নেয়ায় প্রস্তাব দিয়েছেন, এবং তারা তাতে রাজি হয়েছেন।
মীমাংসা করেছি। কারণ নিহত সেলিম ব্যাপারীর একটা ছেলে আছে। ১০ বছর বয়স, ফাইভে পড়ে। তার বউ আর বড় মেয়ে আছে। অসুস্থ মা আছে। তিনি বিছানায় পড়া। এখন দুর্ঘটনাটা ঘটেই গেছে। আমরা মামলাও করছিলাম। তো এমপি সাহেব নিজেই যোগাযোগ করলেন আমাদের সঙ্গে। উনি নিজেও খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন উনার গাড়িতে অ্যাকসিডেন্টটা হওয়ার কারণে। এখন নিহতের পরিবারটাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের মীমাংসা করা ছাড়া কোনো পথ ছিল না।
টাকা পয়সা কোনো লেনদেন এখনও হয় নাই। শুধু কথা হয়েছে, পরিবারটার মাসিক খরচ বিশ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেবে। এছাড়া আমরা এককালীন ৫০ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। তাতে সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবদুল আলিম আরও জানিয়েছেন, নিহত সেলিম ব্যাপারীও গাড়ির চালক ছিলেন। গাড়ি বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।
পুলিশ অবশ্য বলছে, তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
যে ধারায় এই মামলা হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী এবং তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: বিবিসি