রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট:
দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতার দায়ে মাহমুদুল ইসলাম’কে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগ থেকে সেলস এন্ড মার্কেটিং বিভাগে বদলি করেছে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স। সম্প্রতি কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর ব্যবস্থাপনা টিম থেকে মাহমুদুল ইসলাম এর নাম ও ছবি সরিয়ে মার্কেটিং টিমে তার ছবি ও নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগীয় প্রধান হিসাবে তিনি দায়িত্বপালন করে এসেছিলেন। কিন্তু দায়িত্ব পালনে অবহেলা, বেশিরভাগ সময় নিজের বই প্রকাশনা ও বিক্রি, অগ্রগতি অনলাইন ফেসবুক পেজে বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণসহ নানারকম ব্যক্তিগত কাজে সময়ক্ষেপণ করায় ডেস্ক এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে তাকে কোম্পানির সেলস এন্ড মার্কেটিং বিভাগে ইভিপি পদে বদলি করা হয়েছে। অবশ্য এর আগে বীমা পেশায় পূর্ববর্তী তিনটি কোম্পানিতে তিনি মার্কেটিং অফিসার হিসাবেই কাজ করেছেন। কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া জীবনে প্রথমবার ডেস্ক অফিসার হিসাবে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসাবে গুরু দায়িত্ব পালন করতে এসে হোঁচট খেলেন মাহমুদুল ইসলাম।
অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানির বিভিন্ন অফিসে ট্রেনিং দিতে গিয়ে একই রকমের ভিডিও ক্লিপ প্রজেক্টরে প্রদর্শন করেন মাহমুদুল। এরপর নিজের লেখা বইয়ের কোনোরকম ও কেনার প্রয়োজনীয়তার উপর লেকচার প্রদান করেন। এতে করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তার প্রশিক্ষণের উপর বিরক্ত হয়ে তাকে আর আমন্ত্রণ জানান না। ডেস্ক কর্মকর্তা হয়ে মাসশেষে ফিক্সড স্যালারী, কোম্পানির কম্পিউটার, প্রিন্টার, নেট লাইন, কাগজ, কলম, সময়, পরিচিতি ব্যবহার করে সে এপর্যন্ত বীমার উপরে এক ডজনের বেশি বই প্রকাশ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, মাহমুদুলের বেশিরভাগ বই অন্যের লেখা থেকে কপি করা।
এছাড়া বিভিন্ন বীমা ম্যাগাজিনের কলাম, ইডরা এর নীতামালা গাইডলাইন ও বিভিন্ন বীমা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল থেকে কপি-পেস্ট করে লেখা হয়েছে। তার লেখা বইয়ের ভাষা, ভাব, বর্ণনা রীতি, বক্তব্যের ধারাবাহিকতা ও বিশ্লেষণ সক্ষমতা বিচার করলে সহজেই কপি-পেস্ট এর বিষয়টি বোঝা যায়। মূলত: নিজের ডেস্ক কর্মকর্তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে বইয়ের প্রচার, বই বিক্রি ও অগ্রগতি অনলাইন ফেসবুক পেজে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পিছনে বেশি সময় ব্যয় করছেন মাহমুদুল। তাই দায়িত্বে অবহেলা ও দাপ্তরিক ব্যর্থতার দায়ে তাকে ডেস্ক থেকে সেলসে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য বার্ষিক সম্মেলনে ক্রেস্ট ক্রয়ে দুর্নীতি ও নিজের তৈরি বীমা সংগঠন বিআইডিএস এর ব্যক্তিগত কাজে এনআরবি ইসলামিক লাইফের অফিসিয়াল ইমেইল ব্যবহার এর অভিযোগ তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল।
মাহমুদুল ইসলাম বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ডেভলপমেন্ট সোসাইটি (বিআইডিএস) এর স্বঘোষিত প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সে বীমা পেশাজীবীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে সদস্য ফি, আজীবন সদস্য ফি, এককালীন চাঁদা, পিকনিকের জন্য চাঁদা, প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চাঁদা, পুরস্কার প্রদানের জন্য চাঁদা গ্রহণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ বাস্তবে এই সংগঠনের কোনো অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া সে ‘অগ্রগতি অনলাইন টিভি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করে। মূলত: বিটিআরসি থেকে কোনোপ্রকার সম্প্রচার লাইসেন্স গ্রহণ না করে সে ‘টিভি’ নাম ব্যবহার করছে, যা একধরণের প্রতারণা। আসলে সে অনেক ধূর্ততার সাথে তার নিজের বই বিক্রির জন্য এই প্লাটফর্ম তৈরি করে। মূলতঃ বিভিন্ন বীমা কোম্পানির এমডি, ডিএমডি, সংগঠন প্রধান, ইনচার্জদেরকে সে এই অগ্রগতি অনলাইন ফেসবুক পেজে আমন্ত্রণ জানায়। পরে আমন্ত্রিত এসমস্ত কর্মকর্তাদের রেফারেন্সে সে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিতে তার নিজের লেখা কপি-পেস্ট বই বিক্রী করে। বিআইডিএস এর মাধ্যমে গ্রহণকৃত চাঁদা এবং বই বিক্রীর টাকা দিয়ে সে ইতিমধ্যে রাজধানীর পল্লবিতে একটি ফ্লাটের গর্বিত মালিক হয়েছেন। সূত্র জানায়, এছাড়া তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে একাধিক ব্যাংকে এফডিআর বিনিয়োগ ও ভাল এমাউন্টের ডিপিএস একাউন্ট চালু আছে।
বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অফিসে অনলাইন টিভির সাংবাদিক হিসেবে তার অবাধ যাতায়াত। কর্তৃপক্ষের পরিচালক(প্রশাসক) এহসান উল হান্নান ও পরিচালক(আইন) মো: আব্দুল মজিদ সাহেবের দপ্তরে প্রায়ই তাকে দেখা যায়। ইডরার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “মাহমুদ এই অফিসের অনেক জুনিয়র অফিসার ও পিয়নদেরকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির অডিট রিপোর্ট, হিসাব প্রতিবেদন, অভিযোগের চিঠি ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।”
এনআরবি লাইফের পরিচালনা পর্ষদের ভিতরে পরিচালকদের দ্বন্ধ উস্কে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে মাহমুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি কোম্পানির এক প্রভাবশালী পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও ইডরায় নানা তদবীর করারও অভিযোগ রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের জয়পুরাহাট জেলায় জন্মগ্রহণকারী মাহমুদুল ইসলাম প্রাইম লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে বীমা এজেন্ট পদে বীমা পেশায় কাজ শুরু করেন। কয়েকবছর পরে ২০১৪ সালে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সে যোগদান করেন। এরপর ২০২১ সালে রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর (আর.সি) পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় উচ্চ পদের আশায় জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চলে যান। কিন্তু যথাযথ প্রক্রীয়া অবলম্বন করে অফিসের আসবাবপত্র ও দায়-দায়িত্ব সঠিকভাবে বুঝিয়ে না দেয়ায় প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স তার নিয়োগ ও কোড নাম্বার বাতিল করে। এরপর দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় মাহমুদুল এর ছবিসহ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে কোনরকম ছাড়পত্র ছাড়াই জেনিথ ইসলামী লাইফে ডিএমডি(মার্কেটিং) পদে যোগদান করে মাহমুদুল। কিন্তু আশানুরূপ লোকবল নিয়োগ দিতে না পারায় ও কাঙ্ক্ষিত ব্যবাসা জমা দিতে না পারায় কয়েকমাসের মধ্যে তাকে জিএম(মার্কেটিং) পদে পদাবনতি প্রদান করে জেনিথ ইসলামী লাইফ। এরপর ব্যবসা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং পদাবনতির লজ্জায় জেনিথ ইসলামী লাইফের চাকুরী ছেড়ে ২০২১ সালের শেষের দিকে জীবনে প্রথমবারের মতো ডেস্ক অফিসার হিসাবে যোগদান করেন এনআরবি লাইফে। সেখানেও দায়িত্ব অবহেলা ও দাপ্তরিক ব্যর্থতার দায়ে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে আবারো মার্কেটিং বিভাগে।
মাহমুদুল ইসলাম তার বিভিন্ন বই ও লেখায় নিজের পরিচয় দিতে উল্লেখ করেন, সে বিবিএস (অনার্স), এমবিএস (ম্যানেজমেন্ট) সম্পন্ন করার পরে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা, সেলস অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। অভিযোগ রয়েছে, তার এসব ডিগ্রির সত্যতা ও গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে। খতিয়ে দেখা দরকার, এসব ডিগ্রি সে পড়ালেখা করে অর্জন করেছে নাকি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছে।
মাহমুদুল ইসলাম এর বিভিন্ন ডিগ্রির বৈধতা, কপি-পেস্ট বইয়ের সত্যতা ও অস্বাভাবিক অর্থের সকল উৎসের সন্ধানে সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এছাড়া অন্যের লেখা কপি করে বই লেখা ও বিক্রিতে প্রতারনার আশ্রয় গ্রহণ এবং অনলাইন ফেসবুক পেজকে টিভি পরিচয় দিয়ে শঠতার আশ্রয় গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবী।
এসব অভিযোগের বিষয়ে এই প্রতিবেদক মাহমুদুল ইসলাম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে যাওয়ার জন্য বলেন। আর কোম্পানির সিইওর ফোনে কল করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়, পরে হোয়াটঅ্যাপে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সূত্র: দেশঅর্থনীতি.কম