শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
ফরিদপুরে আজ শনিবার রাতে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুদিনের সাহিত্য সম্মেলন। ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে এ সাহিত্য সম্মেলন ও পুরস্কার বিরতণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কবি জসীমউদ্দীন হলে।
এ সাহিত্য সম্মেলনে ২০০১ ও ২০১২ সালের জন্য সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার প্রাপ্ত ছয়জন কবি, সাহিত্যিক ও লেখকের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
২০০১ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, ‘বলি যে তারানা হচ্ছে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য কবি আলতাফ হোসেন, ‘মেঘ পাহাড়’ উপন্যাসের জন্য ওয়াসি আহমেদ, ‘মুক্তিযুদ্ধে রাইফেল্স ও অন্যান্য বাহিনী’ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থের জন্য সুকুমার বিশ্বাস। ২০১২ সালের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, ‘ঘরে ফেরা সোজা নয়’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আসাদ চৌধুরী, ‘এইসব জীবনযাপন’ ছোটগল্পের জন্য রফিকুর রশীদ ও ‘জলপুত্র’ উপন্যাসের জন্য হরিশঙ্কর জলদাস।
এর মধ্যে উপন্যাসিক ওয়াসি আহমেদ, কবি আসাদ চৌধুরী ও সুকুমার বিশ্বাস বিদেশে থাকায় তারা নিজেরা হাজির হয়ে পুরস্কার নিতে পারেননি। বাকি তিন পুরস্কার বিজয়ী উপস্থিত থেকে অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার হিসেবে সনদ, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।
‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া/ বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া’-সম্মিলিত কণ্ঠে এ বোধন সংগীতের মধ্যে দিয়ে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফরিদপুরে দুইদিনের সাহিত্য সম্মেলনের শেষ অধিবেশন আলাওল সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ পর্ব।
বোধন সংগীতের পর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ গানের সাথে সাথে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এর স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অতিথিদের ফুলের শুভেচ্ছা প্রদানের পর সকলকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সাহিত্য মানুষের কথা বলে জীবনের কথা বলে। মানুষ বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্যে দিয়ে তার সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তার লেখনীর মধ্যে দিয়ে।
তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে। এজনপদের কবি সাহিত্যিক বিশ্বে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন তাদের কাজের মধ্যে দিয়ে। তারা তাই কালজয়ী এবং সর্বদা স্মরণীয়।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার দেশে একটি মর্যাদাশীল পুরস্কার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এতে ফরিদপুরের সুনাম বাড়ছে। সাহিত্যের পিষ্ঠপোষকতায় ফরিদপুর এক অনন্য স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. আবুল ফয়েজ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লোকমান হোসেন মৃধা, পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান প্রমুখ।
পরে প্রধান অতিথি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি সাহিত্যিক ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ তুলে দেন। পরে অনুষ্ঠিত হয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দুদিনের এ সাহিত্য সম্মেলন।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে ‘বাংলা কথাসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক অরুণ বসু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সরকার আব্দুল মান্নান।
মূল প্রবন্ধে সরকার আব্দুল মান্নান বলেন, দেশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কথাসাহিত্যের জগৎ এর মৌলিক কিছু প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যুদ্ধোত্তর প্রথম দশকে কাহিনীর মধ্যে প্রত্যক্ষ ও প্রবল দৃশ্যগ্রাহ্যতা লক্ষ করা যায়। কিন্তু পরবর্তী দশকগুলোতে প্রত্যক্ষতার পরিবর্তে অভিজ্ঞান এবং দৃশ্যগ্রাহ্যতার পরিবর্তে কল্পনাপ্রতিভার প্রাবল্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, মহাকাব্যিক না হলেও ক্যানভাসের যে বিশালতা নিয়ে উন্মেষলগ্নের কথাসাহিত্য জীবনতৃষ্ণার পেয়ালাটা ছড়িয়ে দিয়েছিল পরে তা আর রক্ষিত হয়নি বরং ক্যানভাস আরো ছোট হয়ে এসেছে এবং জীবনতৃষ্ণার জল নয়-রসাস্বাদের বোধ তৈরি হয়েছে।
সেমিনারের মূল আলোচক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা তরিকুল আহসান বলেন, সামগ্রীকভাবে সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের যে উজ্জ্বল ভূমিকা থাকার কথা ছিল তার দুর্বলতা প্রকট। এ দুর্বলতা আমাদের ঘোচাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি দীর্ঘ পটভূমিকা রযেছে। দেশ বিভাগ, লড়াই, সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমাদের যে মহাকাব্যিক অর্জন সাহিত্যে তার সঠিক ব্যঞ্জনা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমাদের এ ব্যঞ্জনাই খুঁজে বের করতে হবে।
বাংলা একাডেমির উপপরিচালক তপন বাগচী বলেন, কোনো গবেষণাই সম্পূর্ণ নয়। মুক্তিযুদ্ধ একটি ব্যপকতর বিষয়, আমাদের সাহিত্যে তার সঠিক প্রতিফলন থাকতে হবে এর দায়িত্ব তরুণদেরই নিতে হবে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দুলাল সরকার, আবু সুফিয়ান খান, শওকত আলী ও উত্তম দত্ত।
সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে বিকেলে কবিতা ও গল্প লেখা বিষয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয় ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার নিজস্ব মিলনায়তনে। সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে পাটের তৈরি স্মারক ব্যাগ ও একটি স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়।