শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ! টাকার বিনিময়ে বিদ্যুতের তার খাম্বা মিটার এনে দেন ইলেকট্রিশিয়ান জুলিয়ান!
‘রোগীরা হাসপাতালের অতিথি, বিশেষ নজর দেবেন’

‘রোগীরা হাসপাতালের অতিথি, বিশেষ নজর দেবেন’

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘রোগীরা হাসপাতালের অতিথি। আপনাদের (চিকিৎসকদের) কোনো আচরণে তারা যেন মনে কষ্ট না পান, সে দিকে বিশেষ নজর দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা (চিকিৎসকরা) আজ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জাতির মূল্যবান মানবসম্পদ। আপনাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সমাজ ও রাষ্ট্রের অপরিসীম অবদান রয়েছে। তাই সমাজের কাছে আপনাদের দায়বদ্ধতা সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি। আমার বিশ্বাস আপনাদের মেধা, মনন, চিকিৎসা ও মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে দেশের মানুষের সেবা প্রদান করবেন।’

সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লক সংলগ্ন মাঠে তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে আসে। তাই রোগীরা যাতে হতাশ হয়ে ফিরে না যায় সে চেষ্টা করতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় দেখা যায় ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসায় রোগীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। অনেক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীদের অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। অনেক রোগীর পক্ষেই এসব ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে তারা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অল্প কিছু লোকের অসাধুতার জন্য যাতে চিকিসার মতো মহান পেশার সুনাম নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিও দিন দিন আধুনিকায়ন হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ এখন বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই সেবা নিতে পারছে। তাই আপনাদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বশেষ উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। রোগীরা যাতে স্থানীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে আরো ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। ডাক্তারে সয়লাব করে দেওয়া হবে গ্রাম। দেখব, কোন ডাক্তার গ্রামে যেত চায় না।’

তিনি বলেন, ‘কিছু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে মানহীন। শিক্ষক নেই, লাইব্রেরি নেই, এমনকি রোগী পর্যন্ত নেই। তদন্তে গেলে দেখা যায় তারা রোগী ভাড়া করে আনে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হলে কিছু আইনজীবী তাদের পক্ষাবলম্বন করে আদালতের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে তৈরি করা। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তনে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গাইনোকলজিস্ট অধ্যাপক এ এইচ এম টি এ চৌধুরী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান।

সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের সাত গুণী চিকিৎসককে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন। এরা হলেন- বিএসএমএমইউর নেফ্রোলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মতিউর রহমান, প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. এ কে এম নুরুল আনোয়ার, ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অর্থোডনটিকস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক এবং বিএসএমইউর অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আফজালুন নেছা।

সমাবর্তনে ১ হাজার ২১৬ জন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী চিকিৎসক অংশ নিয়ে তাদের সনদ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে মেডিসিন অনুষদে ৩৪৪ জন, সার্জারি অনুষদে ৩৯৫ জন, বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদে ২৪৩ জন, ডেন্টাল অনুষদে ৫১ জন, প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদে ১৪১ জন চিকিৎসক এবং নার্সিং অনুষদে ৪২ জন ডিগ্রিধারী নার্স সনদ গ্রহণ করেন। ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০৭ জন ছাত্র এবং ৬০৯ জন ছাত্রী রয়েছে।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছয় অনুষদের ছয়জনকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। এরা হলেন- মেডিসিনের ডা. হোসনে আরা, সার্জারির ডা. অনিন্দিতা দত্ত, ডেন্টালের ডা. ডাউরিকা প্রসাদ, বেসিক সায়েন্সের ডা. এনামুল কবীর, প্রিভেন্টিভ ও সোসাল মেডিনের ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী, নার্সিং অনুষদের মাহমুদা আক্তার। এ ছাড়া ছয়টি অনুষদের ১২ জন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করেন।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, প্রাক্তন উপাচার্যবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, সনদ অর্জনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে দেশের একমাত্র উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল রিসার্চ প্রতিষ্ঠানটি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভারতসহ ১০টি দেশের ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী ও রেসিডেন্ট বিভিন্ন বিষয়ের উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com