সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: ছাতকে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শক পদে দায়িত্বরত একজন সরকারি কর্মচারীকে আইন ও আচরনবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
ইউনিয়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সংসদ সদস্যের সঙ্গে হাত উঁচিয়ে ফটোশেসন করা শামসুর রহমানের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
গত ১৭ মে মঙ্গলবার বিকালে আয়োজিত সম্মেলনে উত্তর খুরমা ইউনিয়নে দলীয় সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় একই ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক শামসুর রহমানকে। তার বাড়ি ইউনিয়নের কাকুরা গ্রামে।
সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বলেও জানায় দলীয় নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউপির সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের বুকারভাঙা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে উত্তর খুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশ ত্রি বাষিক সম্মেলনের আয়োজন করে। অনুষ্টিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।
সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান সরকারি কর্মচারি শামসুর রহমান। সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সংসদ সদস্যের সঙ্গে হাত উঁচিয়ে ফটোশেসন করেন শামসুর রহমান।
উল্লেখ্য, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ এর ২৫ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, “সরকারী কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোন অঙ্গসংগঠনের সদস্য হইতে অথবা অন্য কোনভাবে উহার সহিত যুক্ত হইতে পারিবেন না, অথবা বাংলাদেশে বা বিদেশে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করিতে বা কোন প্রকারেই সহায়তা করিতে পারিবেন না।”
আইনজ্ঞদের অভিমত, সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রণীত আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক দলের পদে আসীন হয়ে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক শামসুর রহমান চাকরির শর্ত ভঙ্গ করে স্বপদে থাকার আইনগত ও নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
তার অনিয়ম দুনীতি স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের জবাবদিহিতার স্বার্থে দ্রুত বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে নেতাকমীরা অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানান, “সরকারের বেতনভুক্ত জনস্বার্থে লিপ্ত থাকা একজন পরিপূর্ণ সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও পদে আসীন হওয়ার জন্য দায়ী। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চৌধুরী রাজিব মোস্তফা বলেন, “শামসুর রহমান উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে কর্মরত আছেন। তাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অফিসিয়ালি অবগত নন। এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক নিরঞ্জন বন্ধু ধাম জানান, “এমনটা হয়ে থাকলে ডেফিনেনরি এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। আমার দৃষ্টিতে এ সংক্রান্ত গ্রুপ আসলে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব বলে নিশ্চিত করেন।
এদিকে, একজন সরকারি কর্মচারীকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার ঘটনায় উপজেলাজুড়ে রাজনৈতি অঙ্গনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর দায়ভার নিতে চাচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতাকমীরা।
এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের প্রতিনিধি আজমল হোসেন সজল এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “উত্তর খুরমা ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানতাম না। পরে শুনেছি, আমাদের সংসদ সদস্য তাঁর অনুসারীদের দিয়ে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছেন। এই ইউপির পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছেন শামসুর রহমান। সেখানে একজন সরকারি কর্মচারিকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে এমপি মানিক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান একটি
বিতর্কের সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, “একজন আইন প্রণেতার উপস্থিতিতে দলের নাম ব্যবহার করে এ জাতীয় বেআইনি কর্মকান্ড – দেখে আমরা বিস্মিত, ক্ষুব্ধ হয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। এতে দলের যে বদনাম হচ্ছে তার দায়ভারও সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে। আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের নজরে নিয়ে আসব।”
এ ব্যাপারে উত্তর খুরমা ইউপির পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে কর্মরত শামসুর রহমানের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নিতে ফোন দেয়া হলে সংবাদকমী পরিচয় জেনে ও নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে ফোন দেবেন বলে লাইনটি কেটে দিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।