শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এ ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাফল্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের কয়েকজন বলছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করছেন তারা। কিন্তু তারা সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন ১২-১৮ মাসে মধ্যে। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করার সময় এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে গতিশীলতা আসে।
মডার্নার প্রধান মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পল বার্টন বলেছেন, তাদের আশা, আগামী ৫ বছরের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনের মতো ‘সব ধরনের রোগের চিকিৎসা’ মানুষকে তারা দিতে পারবেন।
বিশ্বে করোনা ভাইরাসের যতগুলো কার্যকরী ভ্যাকসিন বাজারে এসেছে এরমধ্যে মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিনটি সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। বর্তমানে ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডাক্তার পল বার্টন বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এ ভ্যাকসিন থাকবে এবং এটি খুবই কার্যকরী হবে। ভ্যাকসিনটি কয়েক কোটি মানষের জীবন রক্ষা না করলেও কয়েক লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করবে। আমরা মনে করি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের বিশেষ ভ্যাকসিন দিতে পারব আমরা।’
এছাড়া তিনি বলেছেন, মাত্র একটি ভ্যাকসিনের মাধ্যমেই শ্বাসতন্ত্রের একাধিক রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে। এরমাধ্যমে দুর্বল মানুষ করোনা, ফ্লু এবং শ্বাসতন্ত্রের সিনসিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) থেকে রক্ষা পাবেন। অপরদিকে যেসব বিরল রোগের কোনো ওষুধ এখনো বের হয়নি সেগুলোতে এম-আরএনএ থেরাপি ব্যবহার করা যাবে। এম-আরএনএ থেরাপি শরীরের কোষগুলোকে জানান দেয় কীভাবে প্রোটিন তৈরি করা হয়। যেটি শরীরে ইমিউন সিস্টেমকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সচল করে।
ডাক্তার বার্টন বলেছেন, ‘আমি মনে করি যেসব রোগের ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি, সেসব রোগ সারিয়ে তুলতে আমাদের কাছে এম-আরএনএ ভিত্তিক থেরাপি থাকবে। আমি মনে করি এখন থেকে ১০ বছর পর, আমরা এমন একটি অবস্থানে পৌঁছাব, যে সময় সত্যিকার অর্থে রোগের জেনেটিক কারণ খুঁজে বের করতে পারব এবং এম-আরএনএ ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটি সারিয়ে তুলতে পারব।’
তবে বর্তমানে যে গতিতে এ কার্যক্রম এগিয়ে চলছে, এটি যদি ধরে রাখতে হয় তাহলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। যদি পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না পাওয়া যায় তাহলে পুরো বিষয়টিই বৃথা যাবে।
এম-আরএনএ অণু শরীরে কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদন করার জন্য নির্দেশ দেয়। সিনথেটিক আকারে এটি শরীরে পুশ করলে রোগ প্রতিরোধে আমাদের যে প্রোটিন প্রয়োজন সেটি উৎপন্ন হয়।
একটি এম-আরএনএ ভিত্তিক ক্যান্সার ভ্যাকসিন— শরীরের ভেতর যে ক্যান্সারের কোষগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটিকে ধরে ফেলে ইমিউন সিস্টেমকে সতর্ক করে দেবে। এরপর এটি ক্যান্সারের কোষগুলোর ওপর হামলা চালাবে এবং ধ্বংস করে দেবে। তবে এ সময় শরীরের ভালো কোষগুলোর কোনো ক্ষতি করবে না এটি।
এছাড়া এটি ক্যান্সার কোষগুলোর ওপর প্রোটিনের যে খণ্ড থাকে সেগুলো খুঁজে বের করবে, যেগুলো ভালো কোষে থাকে না— এটি ইমিউন সিস্টেমকে সচল করবে এবং এরপর এম-আরএনএ এর টুকরো তৈরি করবে যেটি শরীরকে নির্দেশনা দিবে কীভাবে এ প্রোটিন উৎপন্ন করতে হয়।
প্রথমত, ডাক্তাররা রোগীর ক্যান্সার টিউমারের বায়োপসি করবেন এবং এটি ল্যাবে পাঠাবেন। এরপর ল্যাবে এর জেনেটিক মিউটিশন খুঁজে বের করা হবে, যেটি ভালো কোষে থাকে না।
এরপর অ্যালগরিদম খুঁজে বের করবে কোন মিউটিশনটি শরীরে ক্যান্সার বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি এটি খুঁজে বের করবে কোন প্রোটিন ইমিউন সিস্টেমকে সচল করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। এরপর সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে কার্যকরী এন্টিজেন তৈরি করা হবে এবং বিশেষ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হবে।