শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের চাকরি থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রশ্নফাঁসে গঠিত তদন্ত কমিটির দেয়া প্রস্তাব বিবেচনা করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসন্ন এইচ এস সি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ৫২টি মামলা হয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িত ১৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত পরীক্ষার্থীদেরও বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদেরও চাকরি থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ’
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন, তারা পার পেয়ে গেছেন ভাবার কারণ নেই। প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই, এখনও চলছে। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। ’
আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যাবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগে যা বলেছি এবং করেছি তারপর আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। যার ফলে আমরা আগের চেয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেক ব্যবস্থা ও অনেক বেশী পদ্ধতি গ্রহণ করছি। অনেক কৌশল নিয়েছি। যে পরিমাণ ব্যবস্থা নেয় সম্ভব ততো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
পরীক্ষা চলাকালীন দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সব ধরণের কোচিং সেন্টারই বেআইনি। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রায়ও আছে। কিন্তু দেশে এরকম আরও বেআইনি কাজ হচ্ছে, যা ইচ্ছে করলেই বন্ধ করে দেয়া যায় না। কোচিং সেন্টার আমরা নিজেরা বন্ধ করতে পারি না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বন্ধ করতে পারে।’
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যি এবছর এইচএসসিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩,১১,৪৫৭ জন। যা গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ১,২৭,৭৭১ জন বেশি। বৃদ্ধির হার ১০.৭৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১১,৮৩,৬৮৬ জন।
এছাড়া মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৭৯টি। মোট কেন্দ্র বেড়েছে ৪৪ টি। ২০১৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২,৪২,৪২৬ জন, ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২,১৭,৫২১জন। বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪,৯০৫ জন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, পরীক্ষা শুরুর ৩০ (ত্রিশ) মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ (পঁচিশ) মিনিট পূর্বে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বারে সেট কোড ব্যবহারের নির্দেশনা যাওয়ার পর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।
কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতিত অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার থেকে শুরু হয়ে ১৩ মে ২০১৮ রবিবার এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৪ মে ২০১৮ থেকে শুরু হয়ে ২৩ মে ২০১৮ শেষ হবে।
২০১২ সালে শুধু বাংলা ১ম পত্রের সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩ টি বিষয়ের ২৫ টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সাল থেকে সর্বমোট ২৮টি বিষয়ের ৫৪টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অতীতের ন্যায় সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত অন্যান্যদের কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি জনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপালসি আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় এবং পরীক্ষার কক্ষে তার অভিভাবক/শিক্ষক/সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সারাদেশের এইচএসসি ও সমমানের সকল পরীক্ষা তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর মোট পরীক্ষার্থী, উপস্থিতি, অনুপস্থিতি ও বহিষ্কারসহ সার্বিক তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে পূর্বের মতোই চালু রয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রগুলোর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হবে।