রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৩ অপরাহ্ন
বরগুনায় ২৬টি সেতুর কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বারবার সময় বাড়িয়ে পাঁচ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এতে চলাচলে ভোগান্তি বেড়েছে। কাজের ধীরগতির কারণে সহসা এ দুর্ভোগ শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না– বলছেন স্থানীয়রা।
২০১৯ সাল থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ২৬টি সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া শুরু হয়। ৮৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭০ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলায় ১১টি, আমতলীতে ৭টি, বেতাগীতে ৫টি এবং তালতলী, পাথরঘাটা ও বামনায় একটি করে সেতুর কাজ শুরু করা হয়। এক বছরের মধ্যে কাজ হস্তান্তরের কথা থাকলেও ৫ বছরেও তা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে, তাও জাননি ঠিকাদার।
আমতলীর আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালের সোনাখালী এলাকায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার সেতুর কাজ পান পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি। সময় বেঁধে দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি। ২০২৩ সালে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েও এ সেতুর কাজ হয়েছে ৭০ ভাগ।
পূর্ব সোনাখালী গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করেন, আবার বন্ধ রাখেন। এখন পুরোপুরি বন্ধ। এতে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেতুসংলগ্ন দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার সাবেক মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌসের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। এর পর একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
একই অবস্থা আমতলীর আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার গার্ডার সেতুর। এর কাজ শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই। মেয়াদ শেষ হলেও এ সেতুর কাজের অগ্রগতি ৬৫ ভাগ। ঠিকাদার হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মৃধা। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর লাপাত্তা শহীদ। বন্ধ রয়েছে মোবাইল ফোনটিও।
আমতলী-তালতলী সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারসংলগ্ন খালে পৌনে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬০ মিটার গার্ডার সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অগ্রগতি মাত্র ৬০ ভাগ। কাজের মেয়াদও বাড়াননি ঠিকাদার।
আড়পাঙ্গাশিয়া এলাকার গাড়িচালক মোঃ জসিম বলেন, জেলা শহরসহ আমতলী-তালতলী দুই উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়ক এটি। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলার বাসসহ অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। কাজ শেষ না হওয়ায় পাশের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। যে কোনো সময় ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বরগুনা জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছগির হোসেন বলেন, একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার কারণে কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হবে।
ঠিকাদার ছগির হোসেন সদর উপজেলায় আরও ৮টি সেতুর কাজ করছেন। ৬টির কাজ শেষ হয়েছে ৯০ ভাগ এবং দুটির ৬০-৬৫ ভাগ। তার ভাষ্য, ৯০ ভাগ শেষ হওয়া ৬টি সেতুর সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের
কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শেষ করা হবে। বাকি দুটির কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
সদর উপজেলার কালিরতবক ভায়া গোলবুনিয়া খেয়াঘাটসংলগ্ন খালে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৬ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ৪ মে। কিন্তু এখনও সেতুর কাজ শেষ হয়নি।
বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান বলেন, সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু না করলে চুক্তি বাতিলসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।