রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদার। কার্জন নামের অন্য এক ব্যাংক কর্মকর্তা ও পুলকেশ দাস বাচ্চু নামে একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন সহযোগী নিয়ে প্রশ্নফাঁস করে আসছিলেন তিনি। কয়েক বছর ধরে প্রশ্নফাঁস করে এই চক্রটি কয়েক কোটি টাকা আয় করেছে।
গতকাল শুক্রবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারীচক্রের ১০ জনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (উত্তর)। এর মধ্যে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাও রয়েছেন। আটক হওয়া ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানা গেছে বলে দাবি করেছেন ডিএমপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার আব্দুল বাতেনের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদার ওরফে রুবেল এই প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীচক্রের ‘মাস্টার-মাইন্ড’। সরকারি চাকরির আড়ালেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রটিকে বড় করে তুলেছিলেন তিনি। তবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগে, অর্থাৎ ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। তার নেতৃত্বে যে চক্রটি গড়ে উঠেছে, তাতে অন্তত ২০ জন সদস্য রয়েছে। বিগত ৭-৮ বছর ধরে এ চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে শতাধিক ব্যক্তিকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে এ চক্রের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কয়েকটি ধাপে ফাঁস করতো। আবু জাফর মজুমদারের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার পুলকেশ দাস ওরফে বাচ্চু ও ব্যাংক কর্মকর্তা কার্জন।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ও এর উত্তরপত্র তৈরি করে পরীক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের হাতে যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ চক্রের ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (উত্তর) এডিসি গোলাম সাকলাইন। তিনি বলেন, ‘পান্থপথে এই চক্রের একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার রয়েছে, যেখানে বসে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরপত্র তৈরি করা হতো। এখান থেকে আবার এসব উত্তরপত্র শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের কাছে সরবরাহ করা হতো।’
এডিসি গোলাম সাকলাইন আরও বলেন, ‘এই চক্রের মূল হোতাদের অচিরেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। চক্রের বাকি মাস্টারমাইন্ডদেরও গ্রেফতার করা হবে।’
ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন আবু জাফর মজুমদার ওরফে রুবেল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন পুলকেশ দাস। আবু জাফর মজুমদার, পুলকেশ দাস ও কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্নপত্র ফাঁসে তারা এটিএম কার্ড আকৃতির একটি ছোট ‘স্মার্ট ডিভাইস’ ব্যবহার করতো, যা সংগ্রহ করেছিলেন কার্জন।
ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, ‘আবু জাফর মজুমদার, পুলকেশ দাস ও কার্জন জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদের চাকরিটাও ভাগিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতার করা হলে জালিয়াতির মাধ্যমে কে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছে, জানা যাবে। এসব তথ্য উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’