সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্কঃ ইতিহাস বলে নিজেরা যে লজ্জায় একবার লাল হয়েছে, সেটি প্রতিপক্ষকে ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে বাংলাদেশও। দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। সেই ক্যারিবীয়রাই যখন আবার বাংলাদেশে, তখন মধুর বদলা নেওয়ার অতীত ফিরে ফিরে আসতেই পারে।
একই সঙ্গে তা সে রকম কিছুর পুনরাবৃত্তির তাড়নাও বাড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে। কে জানে যে গত জুলাইতে অ্যান্টিগা টেস্টে ৪৩ রানে অল আউট হওয়ার মতো কুখ্যাত ব্যর্থতা এবার বিখ্যাত কোনো সাফল্যের মোড়ক দিয়ে ঢাকার চেষ্টায় মুখিয়ে নেই বাংলাদেশ ক্যাম্প! এমন নয় যে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং লজ্জাটা অ্যান্টিগার বাংলাদেশেরই সমানুপাতিক হতে হবে। তবে স্পিনারদের নিয়ে বাংলাদেশের রণসজ্জা যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও একই রকম লজ্জায় ফেলতে সক্ষম, তার উদাহরণ কিন্তু আছে।
সেই উদাহরণ ‘রিওয়াইন্ড’ করে দেখতে ফিরে যেতে হবে একটু পেছনেই। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যর্থতার অতল ছোঁয়া ব্যাটিংয়ে প্রবল সমালোচনার স্রোতে ভেসে যেতে থাকা বাংলাদেশ একই বছরে তুলেছিল তার শোধ। ৪ মার্চ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচ সন্ধ্যা নামার আগেই শেষ হয়ে যায়, কারণ বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক বাংলাদেশের ইনিংস সে মাত্র ১৮.৫ গুটিয়ে গিয়েছিল ৫৮ রানেই! ২২৬ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটের জয় তুলে নেওয়া ক্যারিবীয়রা কি আর জানত যে একই রকম বিভীষিকা অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্যও।
একই বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসে যে একই রকম তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয় ক্যারিবীয়দেরও। যদিও সেবার চট্টগ্রামে যাওয়ার আগে প্রথম দুই ম্যাচে ৪০ রান ও ৮ উইকেটের জয়ে ঢাকাতেই ওয়ানডে সিরিজ পকেটে পুরে ফেলেছিল তারা। সিরিজ নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডেতেই সফরকারীদের সেই লজ্জায় ফেলেছিল স্বাগতিকরা, এর সাত মাস আগে যে লজ্জায় পড়েছিল নিজেরাই।
সাত মাস পর ৫৮-র লজ্জা ফিরিয়ে দেওয়ার ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মোটে ২২ ওভার। ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসানই ক্যারিবীয়দের ৬১ রানে শেষ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে রেখেছিলেন মুখ্য ভূমিকা। ২০১১ সালের সেই দুই ম্যাচই খেলা ফাস্ট বোলার কেমার রোচ প্রায় আট বছর পরও নিজের দারুণ কার্যকারিতার ছাপ রেখেছেন গত জুলাইয়ের অ্যান্টিগা টেস্টেও। চোটের কারণে ছিটকে পড়ার আগে ৫ ওভারের এক স্পেলেই মাত্র ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সর্বনাশ করে যান রোচ। ৪৩ রানের লজ্জায় ডোবা বাংলাদেশের ব্যাটিং পরের ইনিংস তো বটেই, পুরো টেস্ট সিরিজেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
রোচ না থাকার পরও ঘুরে দাঁড়াতে দেননি শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও জেসন হোল্ডাররা। এবার ফিরতি সফরে চোটের কারণে হোল্ডার নেই তবে আছেন রোচ-গ্যাব্রিয়েলরা। অবশ্য অ্যান্টিগার দ্রুতগতির বাউন্সি উইকেটও ছিল তাদের পাশে। বাংলাদেশে নিশ্চয়ই তাদের জন্য সেই ফুল বিছানো থাকছে না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট জেতার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহও যা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ওদের যে পেস বোলিং আছে, সবাইকে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছি। ওই অভিজ্ঞতাটুকু তাই আছেই যে ওরা কেমন বোলিং করতে পারে। তা ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বাংলাদেশের উইকেট তো এক নয়।’
বরং টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলার চ্যালেঞ্জই যে অপেক্ষা করে আছে, মাহমুদ উল্লাহ দিয়েছেন সে আভাসও। যদিও মাত্রই লম্বা ভারত সফর শেষে বাংলাদেশে এসেছে ক্যারিবীয়রা। সেখানকার কন্ডিশনে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্পিন সামলানোর বড় এক পরীক্ষাও হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের। তাতে ফল যদিও খুব ভালো নয়। তবু একটা অভ্যাস তো হয়েছে।
কিন্তু সেই অভ্যাসও যে বাংলাদেশকে বিচলিত করতে পারছে সামান্যই, সেটিও মাহমুদ উল্লাহর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ‘এখানকার কন্ডিশন কিছুটা আলাদা। আমরা যদি আমাদের হোম কন্ডিশনের সুবিধা আমাদের মতো করে নিতে পারি, তাহলে ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে আসতেও পারে।’ গত বছর দুয়েকের মধ্যে তা এসেছেও। নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে টেস্টে জয় তুলে নেওয়া গেছে। ওই দুই দেশের বিপক্ষে উইকেটে স্পিন সাম্রাজ্য গড়ে সফল হওয়ার চেনা ছকই যে ক্যারিবীয়দের জন্যও কাটা হচ্ছে, মাহমুদ উল্লাহ সে ধারণা দিয়ে রেখেছেন এভাবে, ‘আমরা সব সময় যে ধরনের স্পিন-সহায়ক উইকেট তৈরি করি, সেই দিকেই হয়তো আমরা যাব।’
গেলে ২২ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে স্পিন-বিষে ক্যারিবীয়দেরও নাকাল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। কে জানে তাদের ব্যাটিং লজ্জায় ফেলে বদলা নেওয়ার তাগিদও স্বাগতিক ক্যাম্পে বেড়ে আছে কি না! বেড়ে থাকতেও পারে।
কারণ প্রথম টেস্ট তো সেই চট্টগ্রামেই, নিজেরা লজ্জায় ডোবার পর যেখানে পাল্টা প্রতিপক্ষকেও লজ্জায় লাল করেছিল বাংলাদেশ।