শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
কক্সবাজার থেকে নিয়মিত ইয়াবা পরিবহণ করা চাকুরীচ্যুত পুলিশ সদস্য ও পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী ভুয়া এএসআই র্যাংকধারী ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ১০,১০০ পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর আরামবাগ থেকে গ্রেফতার করেছে ।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্ত ও বহিস্কৃত সদস্যদের বিভিন্ন প্রকার ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিবি পুলিশ, র্যাব বা পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেয়া সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্ম করে আসছে চাকুরিচ্যুত এসব সদস্যরা। এসব অপরাধীদের নিয়মিত নজরদারী না থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে বহিস্কৃত সদস্যরা ভুয়া ডিবি, পুলিশের ওয়াকিটকি বা পোশাক ব্যবহার করে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভুয়া নিয়োগ বা বদলী বাণিজ্য জনিত অপরাধ বা মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অপরাধে সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাব এর হাতে ধরা পড়ে আইনে সোপর্দ হয়েছে।
র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে একদল মাদক ব্যবসায়ীর উপর নজর রাখাকালে গোপণ সংবাদে জানতে পারেন, কক্সবাজার থেকে দেশ ট্রাভেলস এর বাস যোগে মাদকের বড় ১ টি চালান ঢাকা আসছে। এমন সংবাদ পেয়ে র্যাব-২ এর আভিযানিক দল রাজধানীর আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে পরখ করাকালে রাত ১০ টায় দেশ ট্রাভেলস এর একটি বাস মতিঝিলের আরামবাগ এসে থামলে বাসটির সকল যাত্রীকে বাসে বসার অনুরোধ করে প্রত্যেক যাত্রীর ব্যাগেজ তল্লাশী করা হয়। পুলিশ এর ইউনিফর্মে এএসআই এর র্যাংক ব্যাজ পরা এক যাত্রীকে বাসের বি-২ সিটে বসে থাকতে দেখে তার চাকুরীস্থল ও আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তিনি চট্রগ্রাম এ সাক্ষ্য প্রদানের জন্য গিয়েছেন, তার পোস্টিং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স জানান। দায়িত্বরত কোম্পানী কমান্ডার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী তার নাম, পদবী জিজ্ঞাসা করলে নামঃ মাহফুজুর রহমান এবং পরিহিত ইউনিফর্ম এএসআই পদের দেখতে পান। গলায় পরিচয় পত্র ঝুলানো দেখতে পেয়ে হাতে নিয়ে দেখেন সেটা কনষ্টবল পদের এবং পরিচয় পত্রের সঙ্গে জন্ম তারিখ, পুলিশের বিপি নাম্বার ও পরিহিত ইউনিফর্ম এর সঙ্গে মিল না পেয়ে তাকে তল্লাশী করবেন জানান। এক পর্যায়ে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা লোকটি চ্যালেঞ্জ ছুড়লে কোম্পানী কমান্ডার তার কোলের উপর থাকা ব্যাগ তল্লাশীকালে ব্যাগের মধ্যে পরিচয় পত্রের আরো একটি ফটোকপি দেখতে পান। এএসআই পদবীর লোকটির কনস্টেবল পদের আরেকটি আইডি কার্ড দেখে তিনি সাক্ষী ও স্থানীয় মতিঝিল থানা পুলিশের সদস্যদের সামনে ব্যাগটি তল্লাশী করে তার ব্যাগ হতে ১০,১০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ৩১,৮০০/- উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে কথিত এএসআই এর র্যাংক ব্যাজ পদধারী ইউনিফর্ম পরা লোকটি জানান, তিনি একজন বহিস্কৃত পুলিশ সদস্য। তিনি ২০১১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন এ কর্মরত অবস্থায় গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় তাকে থানায় সোপর্দ করা হলে তিনি জেলে যান এবং চাকুরীচ্যুত হন। জেল থেকে বের হবার পর থেকে তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। প্রতি মাসে ২/৩ বার করে তিনি কক্সবাজার গিয়ে পুলিশ এর ইউনিফর্ম পরে বড় বড় মাদকের চালান নিয়ে আসেন। তার বিরুদ্ধে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর সোনাডাঙ্গা থানার মামলা নং-২০, তারিখ ২২ মার্চ ২০১৬, ধারা-৩৭৯/৪১১ ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর সোনাডাঙ্গা থানার মামলা নং-২১, তারিখ ২২ মার্চ ২০১৬, ধারা-৩২৩/৩৮০/৪২৭/৫০৬ রুজু হলে তাকে পুলিশ বিভাগ থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। তার বাড়ী খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানার পশ্চিম সোনাডাঙ্গায়।
বাংলাদেশ পুলিশ বা অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করে বাহিনীর মর্যাদা বা সুনাম ক্ষুন্নের চেষ্টা বা আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে এমন অপরাধ ও অপরাধীদের বিষয়ে র্যাব নিয়মিত নজরদারী ও কঠোর হস্তে অপরাধীদের দমন করবে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনে সোপর্দ করে বিচারের আওতায় আনা হবে। উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। -বিজ্ঞপ্তি