শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
১৪ ফেব্রুয়ারি। নিঃসন্দেহে ভালোবাসার দিন বলেই জানে সবাই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনেই শুরু হয়েছিল এরশাদ স্বৈরাচারের প্রতিরোধ।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশে তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করে।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হাজার হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার মিছিলে। মিছিলের সামনেই ছিলেন মেয়েরা। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলটি যখন কার্জন হলের সামনে পৌঁছায়, তখন পুলিশ-বিডিআর মিলে ব্যারিকেড দেয়। শিক্ষার্থীরা সেখানে বক্তৃতা দিতে শুরু করে। সেদিন কোনোরকম উস্কানি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে পুলিশ। প্রথমে টিয়ারগ্যাস আর জল কামান ছোড়ে। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ছাত্ররা ব্যারিকেড ভেঙ্গে সামনে যাবার চেষ্টা করে। এরপর শুরু হয় পুলিশের গুলিবর্ষণ আর বেয়নেট চার্জ।
সেদিন স্বৈরাচার এরশাদের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে জয়নাল, জাফর, কাঞ্চন, দিপালী সাহাসহ সারাদেশে আরও অনেকে শহীদ হয়েছিলেন। রাজপথ সেদিন ছাত্রদের রক্তে একাকার হয়ে যায়। সেদিন থেকে এই দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পর এটাই ছিল ইতিহাসের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছাত্র বিক্ষোভ এবং নিপীড়নের ঘটনা। তা সত্তেও ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। স্বৈরাচার এরশাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সঙ্গে সঙ্গে তার কুকীর্তিও সব ঢাকা পড়ছে। এখনো স্বৈরাচার এরশাদ বহাল তবিয়তে। তার মামলাগুলোও সব হিমঘরে।
ইতিহাসবিদদের মতে ‘যে জাতি নিজেদের ইতিহাস ভুলে যায়, ইতিহাস তাদেরকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি-বেসরকারিভাবে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করা উচিত।’