রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে সুমনের অত্যাচার-নির্যাতনে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বাংলাদেশের অপরাজনীতির নিকৃষ্ট উদাহরণ পিরোজপুরের মহারাজ-মিরাজ মাধবপুরে টোল আদায় নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত-১৯ ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্কাউটের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন, সভাপতি-শাকিল ,সম্পাদক- ছাইফুল ! আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করব না: ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন রেজিস্ট্রার শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার চিলাহাটিতে তেলের ড্রাম বিস্ফোরণে যুবকের মৃত্যু ডোমারে জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান ডোমারে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কমিটি গঠন
নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড এ শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড এ শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড এর এভারগ্রীন বিডি লিমিটেড নামক পরচুলা
কারখানায় শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার শ্রমিক।
২৭ জুন শনিবার সকাল ৮ টা থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ চলাকালে কারখানা
কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে
কারখানায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে কারখানার প্রায়
৫০ টি কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউসহ অনন্য যন্ত্রাংশ বাইরে বের করে নিয়ে
এসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় অফিসের ফ্লোরে রক্ষিত ২০টি মোটর সাইকেল, ৩০টি
বাইসাইকেল, দুইটি কাভার্ড ভ্যানেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে এসব জিনিসপত্র
পুড়ে গেছে। শ্রমিকরা এভারগ্রীনের কর্মরত কর্মকর্তাদেরও এলোপাথারী মারপিট
করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার
ঘটনা ঘটে। ফলে পুরো ইপিজেড এলাকায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক
পর্যায়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি হওয়ায় উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত
হয়েছে। খবর পেয়ে উত্তরা ইপিজেডসহ নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস
বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু
তারপরও উত্তেজিত শ্রমিকদের বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছিলনা। এমতাবস্থায় র্যা
ব-১৩ নীলফামারী সিপিসি-২ এর সদস্যসহ সেনাবাহিনীর একটি দল উপস্থিত শান্ত
করার চেষ্টা করে।
বেলা ১১ টার দিকে নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা এলিনা রহমান, বেপজার জিএম এনামুল হক, পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল
আহমেদ ছুটে আসলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের কাছে নিজেদের দাবী তুলে ধরেন।
এতে জেলা প্রশাসক তাদের দাবি অনুযায়ী সুষ্টু সমাধানের আশ্বাস দেয়ায়
শ্রমিকরা শান্ত হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘ দিন থেকে তারা এভারগ্রীন কোম্পানীতে চাকুরী করে
আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কোন রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না
দিয়ে ইচ্ছেমত ছাটাই (ফায়ার) করছে। বিশেষ করে যাদের চাকুরীর মেয়াদ প্রায় ৮
থেকে ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাদেরকে তুচ্ছ অজুহাতে ছাটাই করা হচ্ছে এবং
তাদেরকেই আবার নতুন করে আবেদন নিয়ে অর্ধেক বেতনে চাকুরী দিচ্ছে। এতে যারা
১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতো তারা ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী
করতে বাধ্য হচ্ছে।এছাড়াও এ কোম্পানীতে বেতন বৈষম্যরে শিকার হচ্ছেন
শ্রমিকরা। এভাবে শ্রমিক ছাটাই ও নতুন নিয়োগের অনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর
মাধ্যমে তামাশা শুরু করেছে এভারগ্রীন কোম্পানী। তারা আরও বলেন, মূলত
শ্রমিকদের রক্তে ঘাম পানি করা শ্রমে আজ এভারগ্রীন এ পর্যায়ে উঠে এসেছে।
অথচ সেই শ্রমিকদেরকেই সম্পূর্ণ বেআইনী ও অমানবিকভাবে ছাটাই করে চলেছে
তারা। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ
কামনা করছি। তাহলেই শ্রমিকদের সাথে এহেন অমানবিক ও আইন বিরুদ্ধ অপকর্মের
মূল হোতাসহ প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে।
শ্রমিকরা বলেন, করোনাকালীন কোম্পানী বন্ধ থাকায় এমনিতে আমরা চরম
দূরাবস্থার মধ্যে দিনাদিপাত করছি। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ আমাদের জীবন
জীবিকা নিয়ে অমানবিক আচরন করছেন। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে উস্কানীমূলকভাবে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ
করার চেষ্টা করে। এতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। তবে
জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি।
এ ব্যাপারে এভারগ্রীনের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেউই কোন মন্তব্য করতে রাজি না হওয়ায় তাদের বক্তব্য
নেয়া সম্ভব হয়নি।
উত্তরা ইপিজেড’র দায়িত্বরত (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন) বেপজা’র
জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো: এনামুল হক জানান, উত্তরা ইপিজেড এ অবস্থিত
অন্যান্য কোম্পানীগুলোতে তেমন কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। এভারগ্রীনের
শ্রমিক অসন্তোষ বিষয়ে আমি আগে থেকেই জানি। সে অনুযায়ী কোম্পানীর
কর্তৃপক্ষসহ আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি সমাধানের জন্য
উদ্যােগ চলমান আছে। এরই মধ্যে এ ধরণের অনাকাঙিখত ঘটনা ঘটে গেলো।এ
ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা নেবো। মালিক পক্ষ ক্ষতি মেনে নিয়েছে এবং
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সাথে বসে একটা সমাধান করা
হবে।
জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ইপিজেডগুলো যেহেতু বেপজা’র
আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাই এ ব্যাপারে বেপজা কর্তৃপক্ষই প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে তা করতে
হবে। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে
করোনাকালীন কোন শ্রমিক যেন ব না বা বৈষম্যরে শিকার না হয়। তাই মালিক
পক্ষের কাছে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমরা আদেশ দিয়েছি। শ্রমিকরাও
তাদের কোম্পানীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত শ্রম দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আশা করি দু’একদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা সমাধান আসবে।
তবে অনাকাঙিখত এ ঘটনায় নীলফামারী জেলার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। শ্রমিক
অসন্তোষের কারণে এটা হলো। কর্তৃপক্ষ শ্রমিক অসন্তোষ নিরোধে দায়িত্বশীল
ভূমিকা না রাখায় এমনটা হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। আগামীতে যেন এ ধরণের আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনার
অবতারণা না হয় সেজন্য কোম্পানী কর্তৃপক্ষসহ বেপজা কর্তৃপক্ষকে সর্তক
থাকার জন্য বলা হয়েছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com