শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
স্বাস্থ্য জন্যে গভীর ঘুম অতি জরুরি। ঘুম এক ধরনের অসুধও বটে। তবে এমন অনেকেই আছেন যাদের ঘুমের সময় লালা ঝরে। এ সমস্যাটা অনেকেরই আছে। এটার কোন বয়েস নেই। তবে শিশু আর বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা একটু বেশি দেখা যায়।
বেশ কয়েকটি কারণে মুখ থেকে লালা ঝরে। চলুন আমারা জেনে নিই ঘুমের সময় লালা ঝরার কিছু কারণ।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে ঘুমানোর সময় খাবার বা পানীয় খাওয়ার পেশিগুলো দেহের অন্যান্য পেশির মতো নিষ্ক্রিয় থাকে। তখন পেশি এদের ধরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় থাকে না। তাই মুখের এক কোণা সেই কোণা থেকে লালা বেরিয়ে আসতে পারে।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে এটা শুধু একটা অভ্যাস নয় এটা অনেক সময় অসুখের লক্ষণও প্রকাশ করে। নিউরোলজি, ঘুম সমস্যা কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে এমনটা ঘটে। স্ট্রোক, সেরেব্রাল পালসি কিংবা মাল্টিপল স্কেলেরোসিস (এমএস)-এ আক্রান্ত হলে ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরতে পারে।
লালা ঝরার কারণসমূহঃ
ঘুমের ভঙ্গিঃ
সাধারণত চিত হয়ে সোজা ভঙ্গীতে ঘুমালে এমন হওয়ার কথা না। আবার কাত হয়ে ঘুমালে কিংবা উপুড় হয়ে ঘুমালে লালা ঝরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ অবস্থায় সাধারণত মুখ নিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয়। তখন মুখ হা হয়ে থাকে। কাজেই লালা বেরিয়ে আসা অনেক সহজ।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
বিশেষ কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে থাকলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ (বিশেষ করে ক্লোজাপাইন) এবং আলঝেইমার্স রোগে ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবে লালা ঝরে।
বন্ধ সাইনাসঃ
ঠাণ্ডা-সর্দির কারণে নাকের ফাক বন্ধ থাকলে ঘুমের সময় লালা ঝরার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারণ তখন নাক বন্ধ থাকে তাই আপনাকে মুখ খুলেই নিঃশ্বাস নিতে হয়। যাদের নাসারন্দ্র জন্মগত কারণেই স্বাভাবিকের চেয়ে সরু, তাদের লালা ঝরার সমস্যা প্রতিনিয়ত থাকে। আর ঘুমের সময় সুস্থ মানুষও যদি মুখ খুলে শ্বাস নেন, তবে একই অবস্থায় পড়বেন।
গেলায় সমস্যাঃ
আগেই বলা হয়েছে এমন হয় ডিসফাজিয়ার কারণে। যদি অযথাই লালা বেরিয়ে আসছে বলে মনে হয়, তবে ডিসফাজিয়াকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে পারেন। এ ছাড়া পারকিনসন্স, মাসকুলার ডিস্ট্রোফি এবং বিশেষ কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ঘুমের মধ্যে লালা ঝরা।
জিইআরডিঃ
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল রিফ্লাক্স ডিসঅর্ডার বা গার্ড (জিইআরডি) হজমপ্রক্রিয়ার এক ধরনের সমস্যা নির্দেশ করে। এ রোগ থাকলে পাকস্থলী থেকে খাবার অন্ননালীতে ফিরে যায়। এতে অন্ননালীর অভ্যন্তরীন দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি হয়। গার্ডের কারণে হতে পারে ডিসফাজিয়া (খাবার গেলায় সমস্যা)। এমনটা হলে খাবার গলার মধ্যে কোনো মাংসপিণ্ডে আটকে যাচ্ছে বলে মনে হবে। গার্ডের কারণে মুখ দিয়ে ঘুমের সময় লালা ঝরে।
স্লিপ অ্যাপনিয়াঃ
এ রোগ থাকলে ঘুমের সময় দেহ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে মুখ দিয়ে জোরপূর্বক শ্বাস গ্রহণ করতে হয়। তাই এমন ঘটনায় স্লিপ অ্যাপনিয়া নেপথ্যে থাকতেই পারে। আর স্লিপ অ্যাপনিয়া এক ভয়াবহ রোগ হয়ে দেখা দেয়।
করণীয়ঃ
প্রাথমিকভাবে এ সমস্যা দূর করতে ঘুমের ভঙ্গিমা বদলাতে বলা হয়। যেহেতু অতিরিক্ত লালা বেরিয়ে আসাটাই সমস্যা, তাই এটা কাটাতে লেবুর ছিলকায় খেলে বেশ উপকার মেলে। অনেকে ম্যানডিবুলার ডিভাইস ব্যবহার করেন। এটা এমন এক যন্ত্র যা মুখে লাগিয়ে ঘুমাতে হয়। এটা ঘুমের সময় মুখ বন্ধ রাখে এবং ঘুমকে আরামদায়ক করে।