শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

নীলফামারীতে কমছে বন্যার পানি, দেখা দিচ্ছে নতুন করে দূর্ভোগ

নীলফামারীতে কমছে বন্যার পানি, দেখা দিচ্ছে নতুন করে দূর্ভোগ

ইব্রাহিম সুজন, নীলফামারী: বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও । বাড়িঘরে ফিরে আসছেন কেউ কেউ। কিন্তু বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন দূর্ভোগ। ঘরে এখন বেড়া, মাথার ওপর চাল,খাবার,ওষুধ কিছুই নেই তাদের। গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল ভেসে গেছে। এছাড়া আয়-রোজগার বন্ধ। সব মিলিয়ে বন্যার্তরা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকার বানভাসিদের সাথে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। দূর্গতরা জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় অনেকের বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। হাস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়ে কম দামে বেচে দিয়েছেন কেউ কেউ। পানি কমতে শুরু করার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি ওঠে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে ব্যবহার করার উপায় নেই। বন্যকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রোগ-বালাই। আমাশয়-ডায়রিয়ার মত রোগের সাথে যুক্ত হয়েছে চর্মরোগ। বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারনে এক রকম অন্ধকারে আছেন বানভাসিরা। ত্রাণ ও পূর্ণবাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় নীলফামারীতে প্রায় ২৭ হেক্টের জমির ফসল হানি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৮৬৭ জন কৃষক। এছাড়া ৮৭টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় ১ হাজার ৩৯ জন মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার বাড়ি ঘর ডুবে গেছে। ডিমলা উপজেলার খগা খড়িবাড়ি ইউনিয়নের আরজু শেখ বলেন, পানি কমাতে ঘরে ফিরেছি। ঘর বলতে কিছুই নেই আছে শুধু বসত ভিটা। বানের পানিতে ঘরের বেড়া পচে বিলিন হয়ে গেছে। সব নতুন করে বানাতে হবে। কিন্তু হাতে টাকা-পয়সা কিছুই নেই। একই উপজেলার বালাপড়া ইউনিয়নের ফরিদুল ইসলামের মুখে আরও শোনা গেল, মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে। মাছের চাষ করেছিলাম তাও ভেসে গেছে। হাস-মুরগি আগেই বেচে দিয়েছি। আয়ের কোন পথই খোলা নেই। ঘর-বাড়ি কিভাবে মেরামত করব তা ভেবে পাচ্ছি না। এর মধ্যে ছোট মেয়ে মৌয়ের আবার চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। স্ত্রী ও বড় ছেলে মুরাদ ডায়েরিয়ায় ভুগছে। ওষুধপত্র নিতে পারছি না টাকার অভাবে। একই রকম হতাশা জলঢাকার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক আনিছুর রহমানের কথায়। বন্যার সময় মাঁচা করে থাকার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কাজে আসেনি। পরবর্তীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। গত ২ আগস্ট সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করায় পরের দিন বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু ঘরে থাকার উপায় নেই। বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। তাছাড়া তো রোগ ব্যাধিতো আছেই। রোগ ব্যাধি দেখা দেয়ার বিষয়টি নজরে আছে বলে জানালেন নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মণ। তাঁর দাবী জেলার ২টি উপজেলা থেকে সামান্য রিপোর্ট পাচ্ছি। কিন্তু রোগ বালাই প্রকট আকার ধারণ করেনি। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ ওরস্যালাইন সরবরাহ করেছি। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগের ওষুধ রয়েছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করা এলাকায় পুর্নবাসন কমূর্সচী শুরু হবে। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে। যাদের বাড়ি ঘর ক্ষতি হয়েছে সেগুলো মেরামত করে দেয়া হবে। ফসল তলিয়ে যাওয়া কৃষকরা আবারও বীজ ও সার পাবেন। এছাড়া চাষের জন্য দেয়া হবে মাছের পোনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অনুযায়ীও এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রেখে আবাদের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com