সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন

মোংলায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে’র ৮ কোটি টাকা ব্যায় প্রকল্পের কাজ শুরু, জানেন না প্রশাসন

মোংলায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে’র ৮ কোটি টাকা ব্যায় প্রকল্পের কাজ শুরু, জানেন না প্রশাসন

মোংলা প্রতিনিধি: মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’র অর্থায়নে ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে সোলার ডিস্যালিনেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলেও জানেন না উপজেলা প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেওই। এ প্রকল্পের আওতায় মোংলা-রামপাল উপজেলায় ২০২টি সয়ংক্রিয় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপন করার কথা রয়েছে। প্রকল্প শুরুর ১২ মাসে তৈরী করেছে মাত্র ১৫টি ইউনিট। প্রশাসনের চোখ ফাঁকী দিয়ে নামে মাত্র মোংলায় কাজ শুরু হলেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরী করছে পানি বিশুদ্ধকরন ইউনিট যা ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পরে আছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। তবে খোঁজ নিয়ে ট্রাস্ট ফান্ড’র কাজের গুনগতমান ও কোন ঠিকাদার কাজ করেছে তা খুজে বের করার আশ্বাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।
মোংলা উপজেলা উপকুলীয় অঞ্চলে লবনাক্ত এলাকার মানুষের সুপীয় পানির দুর্দশার কথা বিবেচনা করে পানি বিশুদ্ধকরন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। মোংলা-রামপালের এমপি বেগম হাবিবুন নাহার জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রীর দায়ীত্বে থাকায় এ অঞ্চলের মানুষের মিস্টি পানির যে একটি বড় সমস্যা তা তিনি নিজের চোখেই দেখেন। তাই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন শাখা-২ গত ২০১৯ সালের ২অক্টোবর স্বাক্ষরিত প্রশাসনিক আদেশ’র মাধ্যমে (স্মারক নং-২২.০০.০০০০.০৮৬.১৪.০৮৮.১৯.৪৩০) মোংলা ও রামপাল উপজেলায় সোলার ডিস্যালিনেশন প্লান্ট স্থাপন করা হবে বলে জানা যায়। এ প্রকল্পের আওতায় মোংলা-রামপাল অঞ্চলের দুস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এখানে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২টি সয়ংক্রিয় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপন করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের মূল মেয়াদকাল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হলো ”বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট”। প্রশাসনিক আদেশে প্রকল্পের আওতায় ”প্রোজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি” এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ”প্রোজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি” গঠনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন এলাকায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে অনুমোদিত প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্বলিত দৃশ্যমান সাইনবোর্ড স্থাপন করার কথাও বলা আছে এ আদেশে কিন্ত তার কিছুই করেননী এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।
প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মোঃ ইসকান্দার হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে মোংলা উপজেলা বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে রামপাল উপজেলায়ও কাজ শুরু করা হবে। তবে কাজের গুনগতমান’র ব্যাপারে জানতে চাইলে পারিবারিক কাজে ব্যাস্ত বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননী তিনি।


ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পের কাজের বিষয়ে মোংলা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ও বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, কিসের প্রকল্প আর কি কাজ, কোথায় হচ্ছে কিছুই জানেন না তারা। তবে গ্রাহকদের কাছে জানতে পারে, ৭৫০ লিটারের ২টি পানির ট্যাঙ্ক,৫টি প্যানেল, ১টি সোলার বসানো হয়েছে যা এক একটি স্থানে কোন রকম ফেলে রাখা হয়েছে। যা শুরুতেই ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।
মোংলা উপজেলা নিবার্হী অফিসার কমলেশ মজুমদার বলেন, ইতিপুর্বে প্রকল্প’র বিষয়ে কিছুই জানা ছিলনা। তবে গত ১৯ আগষ্ট সকাল ১১টা জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও প্রকল্প পরিচালক সচিব শুভাশিস শাহা স্যার আসার কথা থাকলেও তিনি আসেনী। মনে হচ্ছে এই প্রকল্প দেখার জন্যই তিনি আসতে চেয়েছিলেন। তার পরেও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
ট্রাস্ট ফান্ড’র প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ইঞ্জিনিয়ার সোহান আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট প্রকল্পের পানি বিশুদ্ধ করন ইউনিট স্থাপনের কাজ মোংলায় শুরু হয়েছে তা আমার জানা নাই। ১৯ আগস্টের একটি চিঠি পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ১২ মাসে ১৫টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে, মেদকাল বাকি আর ৪মাস। এই সময়ের মধ্যে দুই উপজেলায় আরো  ১৮৭টি ইউনিট স্থাপন করার কথা রয়েছে। তবে প্রতিটি ইউনিটে প্রায় ৩লাখ টাকারও বেশী ব্যায় ধরা হয়েছে। যে ১৫টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে তা পরিকল্পনা বিহীন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরী করা হয়েছে এবং ব্যাবহার অনুপযোগী অবস্তায় পড়ে আছে বলে জানায় এ প্রকৌশলী।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com