শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়েই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিল। কোনো পদক্ষেপেই তা থামানো যায়নি। তাই আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় একগুচ্ছ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাড়তি সেট রাখা, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা শতাধিক কেন্দ্র বাতিল করা, ডাবল প্যাকেটে প্রশ্ন বিতরণ এবং ট্রেজারিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক রাখা প্রভৃতি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এত দিন পরীক্ষার জন্য চার সেট প্রশ্ন করে লটারির মাধ্যমে দুই সেট ছাপানো হতো। কোনো কারণে এক সেটের ব্যাপারে অভিযোগ উঠলে অন্য সেটে পরীক্ষা নেওয়া হতো। কিন্তু এবারের এসএসসি পরীক্ষার সময় দেখা গেছে, দুই সেট প্রশ্নই পরীক্ষার আগে বাইরে চলে এসেছে। তাই এবারের এইচএসসি পরীক্ষা থেকে চার সেট প্রশ্নই ছাপানো হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের হাতে একাধিক বিকল্প থাকবে।
এ ছাড়া আন্তশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার সুনির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রও চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো থেকে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন বাইরে চলে আসার অভিযোগ রয়েছে। তাই এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ কেন্দ্র থেকে শতাধিক কেন্দ্র কমানো হবে।
তা ছাড়া প্রশ্ন বিতরণ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসছে। প্রত্যন্ত এলাকায় কেন্দ্র থাকায় পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগেই থানা ট্রেজারিতে প্রশ্ন জমা রাখা হয়। এত দিন তিন ধরনের প্যাকেট করা হতো। ২০, ৫০, ১০০ ও ২০০টি প্রশ্ন একত্র করে প্যাকেট সিলগালা করা থাকত। এবার শ্রেণিকক্ষ অনুযায়ী প্রশ্নের প্যাকেট করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে সেটা এবার থেকে সম্ভব না হলেও সিলগালা প্যাকেটের ওপর আরেকটি প্যাকেট রাখা হবে। অর্থাৎ প্রশ্নপত্র বিতরণের সময় ডাবল প্যাকেট করা থাকলে সহজেই কেউ প্যাকেট খুলতে পারবে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় একগুচ্ছ পরিবর্তন আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহেদুল খবির চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যেকোনো উপায়ে এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সকল কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, কেবল প্রশাসনিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো কঠিন। এ জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। তাই আগামী এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনে কী কী করণীয় সেসব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করবে মন্ত্রণালয়। এবারে শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি কলেজকে চিঠি দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার মতোই এইচএসসিতেও ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হবে। আর কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হবে।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার সূচিতেও এরই মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষার আগে এক থেকে দুই দিন ছুটি রাখা হলেও এবার তা থাকছে না। শুধু ইংরেজি দুই পত্রের প্রতিটির আগে এক দিন করে ছুটি রাখা হয়েছে। আর পরীক্ষার এই সময়সূচি নিয়ে পরীক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও এর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ে পরীক্ষা শেষ করতে চায়। এতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি অনেকটাই কমবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী মিলে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছেন। শিগগিরই এই তিন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি বৈঠক করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই তিন মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কাজ করবে।
এ ছাড়া বিজি প্রেস থেকে পাঠানো প্রশ্নের প্যাকেটও কোনো ডিভাইস দিয়ে লক করে পাঠানো যায় কি না তাও ভাবা হচ্ছে। যাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে কেউ প্রশ্নের প্যাকেট খুললে সহজেই ধরে ফেলা যায়।
আর সম্প্রতি হাইকোর্টও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সুপারিশ করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদকে প্রধান করে একটি প্রশাসনিক কমিটি করে দিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এত কিছু পরিবর্তনের আভাসের পরও আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নীপা সুলতানা বলেন, ‘এসএসসিতে নানা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়নি। এখন যদি এইচএসসিতেও এমন অবস্থা হয় তাহলে মেধাবীদের পড়ালেখার কোনো মূল্য থাকবে না। আমরা আর প্রশ্ন ফাঁস চাই না। আর এই দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।’