বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদ: অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ‘বর্তমান সংসদে অনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা রয়েছেন’ এমন মন্তব্য করে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। হট্টগোলের মধ্যে স্পিকারের নির্দেশে বক্তব্য প্রত্যাহার করে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন তিনি। পরে বিষয়টি নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি দলীয় আরেক সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা।
আজ রবিবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. ঘারুন রশীদ। তিনি চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেন, যেসব এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ভোট হচ্ছে, সেসব এলাকা আতঙ্কের এলাকায় পরিণত হয়েছে। সেখানে অনেকেই ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংসদে অনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা রয়েছেন’।
ওই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা সংসদে মাইক ছাড়াই তার প্রতিবাদ করতে থাকেন। চিৎকার-চেঁচামেচিতে বক্তব্য শোনা যাচ্ছিল না। এ সময় তিনি কথাগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ দিতে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্পিকার তাকে বক্তব্যটুকু প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
এ সময় স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে হারুনুর রশীদ বলেন, আপনি প্রত্যাহার করতে বলেছেন। আমি আগে উত্থাপন করি। আপনি যদি আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে অবশ্যই প্রত্যাহার করব। এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচি আরো বেড়ে যায়। যে কারণে স্পিকার কোনো কথা শুনতে পাচ্ছেন না বলে হাউসকে জানান।
প্রতিবাদের মুখে বিএনপি দলীয় এমপি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই সংসদে অনির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন’ বলে আমার যে বক্তব্য আপনি প্রত্যাহার করার অনুরোধ করছেন, আমি তা প্রত্যাহার করছি। তিনি আরো বলেন, আপনি সংসদের অভিভাবক। আমি আপনার কাছে ব্যাখ্যা চাই। ইতোমধ্যে দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় ধাপ ও চতুর্থ ধাপের তফশিল হয়েছে। তিন শতাধিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং গোটা পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাদের নির্বাচিত বলা হচ্ছে, তারা কাদের দ্বারা ইলেকটেড (নির্বাচিত)? এই বিষয় আপনার কাছে ব্যাখ্যা চাচ্ছি। আপনি আমাকে (বক্তব্য) প্রত্যাহার করতে বলছেন- (কিন্তু আমি জানতে চাই) তারা কাদের দ্বারা নির্বাচিত? এই বিষয়টি এখানে পরিষ্কার করবেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, সম্প্রতি ফ্রান্সে ভোট হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে। সেখানে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পরও আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ৫০ শতাংশ ভোট পাননি বলে পুনরায় ভোট হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো কাজের জন্য যখন টেন্ডার হয়, সেখানে একজন অংশগ্রহণকারী থাকলে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তাহলে যেসব জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাদের নির্বাচিত করা হচ্ছে, সেসব জায়গায় কেন পুনঃতফসিল করা হচ্ছে না কেন? এতে একটি বড় রকমের সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, আজ নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ করছে না। যে কারণে সরকারি দল ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সারা দেশে হানাহানি-খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন স্থানীয় নির্বাচনে এটা একটু ঝগড়া-ঝাঁটি। ৪০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছে। এরপরও আমরা এটাকে ঝগড়া-ঝাঁটি বলব? স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? কেন আপনারা কথাটা প্রত্যাহার করতে বলছেন? কেন বলছেন? যুক্তিসংগত সাংবিধানিক এই জায়গাটি পয়েন্ট অব অর্ডার আকারে আমি উত্থাপন করতে চেয়েছি। কিন্তু আমাকে প্রত্যাহার করতে বলায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করছি। পরে হারুন সংসদ কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।
এরপর ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শরীক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, উনি (হারুন) ওয়াকআউট করেছেন ভয়ে। বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে হারুন যে দাবি করেছেন তা সত্য নয়। তার নির্বাচনী এলাকায় আলী আজম নামে এক বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল নিজেই বলেছেন স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে তার কোনো আপত্তি নেই। তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আগামী সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তারা এই কাজ করছে। সংবিধান রক্ষার্থে নির্বাচন আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। কে আসবে, কে আসবে না- সেটা বিবেচ্য নয়। বিএনপি-জামাত শিবিরের নির্বাচনে না এলে, কিছু আসে-যায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশে নির্বাচন হবে। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। দেশের মানুষ আমাদের সাথে আছে। আগামী দিনে বিএনপি-জামাতের অস্তিত্ব থাকবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এরপর আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা তিনি বলেন, ওয়াকআউট করে সংসদটাকে খালি করে ফেললে বোধহয় সরকারি দলের সদস্যদের সুবিধা হতো। তবে এত বেশি সুবিধা আমরা দেবো না। এ সময় তিনি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৭৫ লাখ হিন্দু সম্প্রদায় মানুষ কমে গেছে। এমন একটি সরকার বর্তমানে ক্ষমতায়, যারা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক দাবী করেন, সেই সময় কেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে? সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোন বিচার করা হয়নি। এরপর স্পিকার আর কাউকে ফ্লোর না দিলে অধিবেশন শান্ত হয়।