শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
সুব্রত আপন: সদা ভাবনার জালে আটকে থাকা সময়ের এক উজ্জ্বল মুখ এ প্রকৃতি প্রেমি কবি রুদ্র সাহাদাৎ। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী সমুদ্র নিকটবর্তী এলাকা গোরকঘাটায় সংসার গড়ছেন কবি ও কবিতার। কবি ধ্যানমগ্ন হয়ে হৃদয়ে অংকন করতে পেরেছেন সমুদ্রতীবর্তী মানুষের হাসি, কান্না দুঃখ বেদনার প্রতিচ্ছবি। কবিতার পঙক্তিমালাতে উঠে এসেছে দ্বীপাঞ্চলীয় মানুষের সংগ্রামী জীবনের সুন্দর চিত্রকল্প। দ্বীপাঞ্চলের মানুষগুলো যে জীবনের নানা স্বাদ, চাওয়া পাওয়া গুলোকে বিসর্জন দিয়ে দ্বিধাবিভাজিত আকাঙ্কায় লীন হন চেতনার অব্যক্ত প্রত্যয়ে তা কবির কবিতায় স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। পান, মাছ, লবণ ব্যবসায় এ দ্বীপের প্রধান পেশা। উপকূলের নানা ঝড় ঝাপটা যাই আসে তাহা প্রবাহিত হয় উপকূল তীরবর্তী এলাকায়। কবি ঘুরতে ঘুরতে সবুজের সমারোহে খোঁজ করেন ভালোবাসার অমৃতস্বাদ। ছুটে যান বহুদূর বহু সীমানা পেরিয়ে। প্রকৃতপাঠ করেন কখনো সোনাদিয়া, কখনো নাজিরার টেক, কখনো বা হিমছড়ির ঝর্ণা দেখে। কখনো-সকনো নোঙর ফেলেন এঘাটে-ওঘাটে কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার মানুষ নয় বলেই ঘুরে ফিরে বেলা শেষে নোঙর করেন বাঁকখালী ও কোহেলিয়ার ঘাটে। প্রেমিক এ কবি বারংবার প্রেমে পড়েছেন প্রকৃতির অভয়ারন্যে। রসিক এ কবি প্রিয়তমাকে পান খাওয়াবেন বলে আপদমস্তক পান চাষী হয়ে মৈনাক পাহাড়ে উঁচু টিলায় পানেরখিলি হাতে অপেক্ষা করেন দিনের পর দিন। প্রিয়তমার আশায় মৈনাক পর্বতের কুহলিয়া ঘাটে বসে প্রতিক্ষার প্রহর গুনেন।
‘‘মন বসেনা, কোনোখানে, উড়ো উড়ো যৌবন
শুধুই কথাহীন, মাঝে মাঝে দেখা খায়
হৃৎপিণ্ড জুড়ে যেন ভূমিকম্পন’’
কখনো বা বিরহে ভোগেন প্রিয়তমা হারানোর বেদনায়। সাজানো গোছানো পানপাতার সংসার ভেঙে যখন প্রিয়তমা চলে যায় তখন কবির মনে বয়ে যায় কাল বৈশাখীর ঝড়, সুনামীর ঢেউ। বৈশাখ এলে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড চারিদার। অন্তরে বাজে অহর্নিশ প্রিয় হারানোর বেদনা। তবুও মনকে শক্ত করে ঘামাক্ত শরীরের ক্লান্ত যৌবনে আগামীর সৃজনশীল পথে হাঁটেন, দৌড়ান সৃজনশীল ভাবনায়। তারপরেও পেয়ে হারানোর বেদনাকে সামলে নিয়ে যতবার মুক্তবিহঙ্গের মতো উড়তে চেয়েছেন ততবার সবার অগোচরে কেদেঁছেন। কবি যতোবার সত্যিটুকু উপস্থাপন করতে চেয়েছেন ততোবার হোঁচট খেয়েছেন। বেদনায় ব্যতিত হয়ে বলেছেন-
মনে হয় হচ্ছে কংক্রিটের স্তুপে দাড়িয়ে আছি
ধ্বংসের শেষ প্রান্তে, দেয়ালে ঠেকে গেছে পিঠ
পেছনে যাবার সব পথ বন্ধ।
বড্ড ক্লান্ত পরাজিত খেলোয়াড়ের মতো নুয়ে পড়েন মুখ ও মুখোশের খেলায়। মুখের আড়ালে হারিয়ে যায় প্রিয়মুখ, প্রিয় মানুষের মিষ্টিস্বর। কখনো মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে ব্যাতিত হন। রাজনৈতিক যাতাকলে পৃষ্ট হয়ে যখন হয় রাজপথে মানুষের লাশের মিছিল, টিভির পর্দায়, পত্রিকার হেডলাইনে যখন হত্যা, গুম, আহত নিহত সংবাদ দেখা যায় কবির নরম মনে গরম হওয়ায় বয় অর্নবরত। স্তম্বিত হয়ে রাতের আধাঁরে বসে থাকেন ফ্যাকাশের মানুষের রুপ বদলানোর দৃশ্য দেখে। ব্যাতিত হন, লজ্জিত হয়ে বলেন মানুষ হাসলে মনে হয় শয়তান হাসে, মানুষ কাদলে মনে হয় মানবতা কাঁদে। সময়ের কঠিন অবস্থায় উঁচু উঁচু দালানে বেড়ে উঠা মানুষ যখন অসহায় মানুষের কষ্টে ব্যাতিত হওয়ার বদলে যখন উল্টো তামাশা দেখেন, ইচ্ছে মতো খেলে জীবন নিয়ে, তখন ধ্বংসের ধারপ্রান্তে এসে পিঠ যে ঠেকে গেছে তা বুঝতে বাকী থাকে না কবিতার সারাংশে।
পরিশেষে কবির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। কবির আগামী সৃজনশীল ভাবনায় সুন্দর ও সমৃদ্ধশীল হউক।
সমুদ্র নিকটবর্তী পানপাতার সংসার
রুদ্র সাহাদাৎ
ধরন- কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশনী- চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
মূল্য- ১৪০ টাকা।
প্রচ্ছদ- নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
প্রকাশকাল- একুশে বইমেলা২০২০