সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ পানি দূষণ। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে দেশের পানি, বায়ু ও মাটিকে ভালো রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে দেড় কোটিরও বেশি লোক বসবাস করে। তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর পরিবেশে বসবাস করে থাকেন। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। খাদ্যে ভেজালের কারণেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, প্রাণী ভালো থাকবে।
জাহিদ মালেক বলেন, পৃথিবীর জলবায়ু দূষিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় গ্রিন হাউজ ইফেক্ট। বায়ু দূষণ, যানবাহনে ধোঁয়া.. এসবের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে করে বরফ গলে সমুদ্রের পানি বেড়ে যাচ্ছে। বন্যা হচ্ছে, টর্নেডো হচ্ছে, এগুলো প্রতিটিই মানুষের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিকর অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ অনেক বেশি। এর ফলে অনেক অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। নগরায়ন এত হচ্ছে যে গাছপালা থাকছে না। প্রতি বছর বিশ্বে ৬০ লাখ হেক্টর বনায়ন ধ্বংস করা হয়, যা বাংলাদেশের অর্ধেক। বাংলাদেশ বেশি দূষণ করে না। সবচেয়ে বেশি আফ্রিকা, চীন, আমেরিকা, ব্রাজিল, ভারতসহ অন্যান্য দেশ করে। কিন্তু ক্ষতিটা আমাদের বেশি ভোগ করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ২০ শতাংশ জমি শিগগিরই পানিতে তলিয়ে যাবে।
দূষণের প্রভাবে দেশে ক্যান্সার বাড়ছে, কিনডি রোগ বাড়ছে, ডায়াবেটিস বাড়ছে। তাই দূষণরোধে ব্যবস্থাপনাটা আমাদের ভালো রাখতে হবে— উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশ কাজ করছে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী দখল মুক্ত করছেন, নদীগুলো দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করছেন। দূষণরোধে আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, জলবায়ু আর দূষণের কারণে আমাদের মধ্যে রোগবালাই ভয়াবহভাবে বাড়ছে। সেগুলো থেকে আমাদের মুক্ত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, করোনাকালে মাস্ক পরার কারণে সংক্রমণ অনেক কমে এসেছে। করোনা ছাড়াও মাস্ক ব্যবহার অনেক অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছে। সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু অনেক ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, দ্রুত নগরায়নের ফলে রাজধানীতে যানজট এবং শব্দদূষণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমনকি এ শব্দদূষণের মাত্রা এমন যে, এর প্রভাবে আমাদের শ্রুতি ও দৃষ্টি শক্তি কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু মোকাবিলায় ২০০৯ সালে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের জন্য একটি ফান্ড তৈরি করেছিলেন। আমরা পরিকল্পিতভাবে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
খুরশীদ আলম আরও বলেন, মহামারিতে সারা দেশে ডাক্তার, নার্স, গণমাধ্যম, প্রশাসনসহ সবাই মিলে কাজ করেছি। যার ফলে করোনা মহামারিকে আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ক্ষতি ও মৃত্যু আমরা কমাতে চাই। এজন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানসহ আরও অনেকে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এ অবস্থায় গরম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ওয়াসার লাইনে আসা পানির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজধানীবাসী।
তবে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান দাবি করেন, ওয়াসার পানির সঙ্গে ডায়রিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তাকসিম এ খান বলেন, আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। যখন ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায় তখন তারা ১০টি এলাকার ঠিকানা আমাদের দেয়, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই সব এলাকার পানি ল্যাবে টেস্ট করাই। সেই ল্যাব টেস্টে আমরা কোনো ব্যাকটেরিয়া পাইনি। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আইসিডিডিআর,বিকে জানিয়েছি।