মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় আজ বৃহস্পতিবার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর কাছে ২৬ হাজার বাড়ি হস্তান্তর করা হবে। এ বাড়িগুলো হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে দেশের ৫২টি উপজেলাকে পুরোপুরি ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে এ ঘোষণা দেবেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, আজ পঞ্চগড়ে এক হাজার ৪১৩টি এবং মাগুরায় ৯৬টি বাড়ি হস্তান্তর করা হবে।
পঞ্চগড় জেলায় পাঁচটি এবং মাগুরা জেলায় চারটি উপজেলা রয়েছে। বাড়িগুলো হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ দুই জেলার সব কটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে আজ।
সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ৬৭ হাজার ৮০০টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে আজ হস্তান্তর করা হবে ২৬ হাজার ২২৯টি বাড়ি। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। আর আট হাজার ৬৬৭টি বাড়ি নির্মাণাধীন। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন আজ গৃহহীন পরিবারগুলোর কাছে এসব বাড়ি হস্তান্তর করবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার জঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন।
গতকাল দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। বৃষ্টির মধ্যেও প্রকল্প এলাকাজুড়ে সাজ সাজ রব চলছে। বাড়িগুলোকে সাজানো হয়েছে। পাশেই সমাবেশস্থলে শামিয়ানা টানিয়ে ভেতরে সাজসজ্জার কাজ চলছে। এখানেই বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পে ১৪২টি বাড়ি পাচ্ছে ভূমিহীন ও গৃহহীনরা।
সেখানে উপস্থিত লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর জেলায় তিন হাজার ২২৮টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। এরই মধ্যে দুই হাজার ৬৬টি পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুরো জেলায় আরো ৪৩৬টি পরিবার বাড়ি পাবে। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। ’
তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় জেলে, বেদে, ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষ অত্যন্ত খুশি। তাদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নতুন বাড়ি পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। ’
গতকাল লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে জেলা প্রশাসকের কথার সত্যতা মিলেছে। চর বাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী কাজল রেখার সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। তিনি নিজ ঘরে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। কালের কণ্ঠকে কাজল রেখা বলেন, ‘আমি দুই ছেলেমেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে এ ঘরে থাকছি। আমার স্বামী একজন জেলে। এত দিন সোনাইর চরে অন্যের বাড়িতে ছিলাম। এখন সেলাই মেশিন চালিয়ে ভালোই রোজগার করছি। বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতে পারছি। ’
একই প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগে অন্যের বাড়িতে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমার অনেক উপকার হয়েছে। আগে ভাড়া নিয়ে রিকশা চালাতাম। এখন নিজেই একটা রিকশা কিনেছি। ’
চর বাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেকজন উপকারভোগী মো. বাবর। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। মাকে সঙ্গে নিয়ে এই ঘরে থাকছেন তিনি।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে ৬৭ হাজার ৮০০টি বাড়ি হস্তান্তরের কাজ চলছে।