৪৩ বছর বয়সী শাহীনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তিনি ঢাকার সদরঘাটে ‘করিম এন্ড সন্স’ নামে একটি কাপড়ের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন; স্ত্রী রিমা ও আট বছরের মেয়ে সূচনাকে নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে একটি বাসায়।
শাহীনকে নিয়ে গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা ২৭ এ উন্নীত হল। আহতের সংখ্যা ৯; যাদের প্রায় সবাই অগ্নিদগ্ধ।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগুন ধরে যাওয়ায় হাতহত যাত্রীদের অধিকাংশই পুড়ে গিয়েছিলেন। শাহীনের শরীরের ৩২ শতাংশ পুড়েছিল এবং তা ‘ডিপ বার্ন’ ছিল বলে তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন চিকিৎসকরা।
নেপালের চিকিৎসকরা শাহীনের দেহে আগুনের ক্ষতের পরিমাণ ১৮ শতাংশের মতো জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১৮ মার্চ ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর তা ৩২ শতাংশের বেশি দেখা যায়।
গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শাহীনের প্রথম দফার অস্ত্রোপচার হয়। রোববার দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারে তার ক্ষতের ৮০ শতাংশের চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তার অবস্থা ভালোই বলেছিলেন। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
দেশে আনার পর ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হচ্ছে শাহীন ব্যাপারীকে
বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. হোসাইন ইমাম দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ‘ইনফেকশনের কারণে’ সকাল থেকে শাহীনের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।
“তার প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই ধরনের বার্নে ইনফেকশন দ্রুত ছড়িয়ে সারা শরীরে চলে যায়। ফুসফুস, হার্ট সবখানে। তার কার্ডিয়াক সমস্যাও হয়েছে বলে ধারণা করছি।”
তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহীন ব্যাপারীর জীবন দীপ নিভে যায়।
ডা. ইমাম বলেন, “বিকেল ৫টার দিকে আমরা ডেথ ডিক্লেয়ার করেছি। তার পোস্ট মর্টেমের প্রক্রিয়া চলছে।”
সন্ধ্যার মধ্যে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
নেপাল থেকে আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে শাহীনসহ সাতজনকে দেশে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কবির হোসেনকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। বাকি পাঁচজনের অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আহত তিন বাংলাদেশিকে নেপাল থেকেই বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। তাদের দুজন সিঙ্গাপুর এবং একজন ভারতে রয়েছেন। তাদের অবস্থাও স্থিতিশীল বলে খবর পাওয়া গেছে।