রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়া পশ্চিমা মিশনের ১৩ কূটনীতিকের আচরণে বাংলাদেশ অসন্তুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
আজ বুধবার (২৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়া পশ্চিমা মিশনের কূটনীতিকের ব্রিফ করেন প্রতিমন্ত্রী। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এমন অসন্তুষ্টির কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকার যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল তাদের দূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ওই নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি। হিরো আলম সারাদিন সতীর্থদের সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্র অবাধে বিচরণ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হননি বা কোনো অভিযোগ করেননি। অন্য প্রার্থীরাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি।
তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে গুটি কয়েক দূত যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা কখনোই সারাদিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নের বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯ জুলাই দূতদের বিবৃতি দেওয়ার অনেক আগেই অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই দূতরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়। যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়।
শাহরিয়ার আলম বলেন, যৌথ বিবৃতিটি ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে যথা সময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা তাদের কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি এটাও সতর্ক করা হয়েছে যে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবল পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন উপস্থিত ছিলেন। তবে ইতালির কোনো কূটনীতিক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
এর আগে বেলা বেলা ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় উপস্থিত হন মিশনপ্রধানরা। সেখানে বৈঠক শেষে বিকেল ৪টায় একে একে বেরিয়ে যান তারা।
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও হাইকমিশন বিবৃতি দিয়েছিল।
যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছিল, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত এবং জবাবদিহিতার আহ্বান জানাই। আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া নির্বাচনের পরদিন এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। পরে জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে তলব করে বাংলাদেশ।
এর আগে ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের ভোটগ্রহণের দিন বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হিরো আলমের ওপর হামলা হয়। তাকে সড়কে ফেলে মারধর করা হয়।
হিরো আলম অভিযোগ করেন যে, রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তার ওপর যে হামলা হয়েছে, তখন পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারত। কিন্তু তা করেনি পুলিশ।