রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করা হবে। জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর।তিনি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব দম্পতির প্রথম সন্তান। তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রতিকূল স্রোতের যাত্রী হয়ে।শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নবপর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রি শিখর সফলতার মূর্ত স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি।জেল-জুলুম ছিল তাঁর পিতার নিত্যসহচর। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পুরানা ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর।শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজে অধ্যয়নের সময় তিনি কলেজ ছাত্রসংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ছয় দফা দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। কারাবন্দি পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণুবিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। তিমির হননের অভিযাত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি। সমুদ্র সমান অর্জনে সমৃদ্ধ শেখ হাসিনার কর্মময় জীবন।বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি জাতি। শেখ হাসিনার জন্ম গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্বে, মননে সেই গ্রামীণ বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির ছাপ আজও দৃশ্যমান। শেখ হাসিনা যখন বেড়ে উঠছিলেন তখন পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মনে স্বাধীনতার বীজ বপনের সংগ্রামে লিপ্ত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যায় তখন শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর কন্যাসন্তান সায়মা ওয়াজেদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বিপথগামী সেনারা। এ সময় বিদেশে স্বামীর কর্মস্থলে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ সময়ে তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। ওই বছরই ১৭ মে তিনি জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্যে দিয়ে ২১ বছর পর আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। মাঝখানে একবার বিরতি দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তখন থেকে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের মূল কারিগর শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
জন্মদিনের কর্মসূচি
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আসর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এবং শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আজ সকাল ৯টায় মেরুল বাড্ডাস্থ বৌদ্ধ মন্দিরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, একই সময়ে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করবে। এসব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আয়োজনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনাসভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।