মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ফেরত আনা হলো সৌদিতে আটকে থাকা ৩৮ কোটি টাকা ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা সিংড়ায় অবৈধ কমিটির নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ নড়াগাতীর থানার রামপুরা গ্রামে পারিবারিক কলহে ছোট ভাইয়ে আঘাতে বড় ভাই, ভাতিজা গুরুতর আহত কুড়িগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের গৌরীপুর সদর ইউনিয়নে ভিজিডির চাউল বিতরণ ফারইষ্টের শহিদকে ঘিরে ক্ষোভের আগুন বাইশফাঁড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বিজিবি সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন গৌরীপুরে সাংবাদিক ঐক্য ফোরামের উদ্যোগে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে আজ

ভোটের আগে রহস্যময় লেনদেন: সেই ব্যাংক হিসাব এস আলমের পিএসের বাবুর্চির

ভিশন বাংলা ২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬২

অনলাইন ডেস্ক: গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন ব্যাংকের যে হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছিল, তার মালিককে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে। বেসরকারি খাতের এই ব্যাংককে নির্বাচনের এক বছর আগে হিসাবটি খুলে জমা করা হয় নগদ টাকা। হিসাবধারী প্রতিষ্ঠানকে ঋণও দেয় ব্যাংক। এরপর নির্বাচনের আগে সেই হিসাব থেকে নগদ উত্তোলন করা হয় ৭২ কোটি টাকা। ভোটের পরপরই রহস্যময় এই হিসাবে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়, আর এটি পুরোপুরি বন্ধ করা হয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ২০ আগস্ট।

মোস্তাক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাবটি ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর খোলা হয়েছিল ব্যাংকের বনানী শাখায়। ব্যাংকে থাকা নথিপত্রে ঢাকার যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে যাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে হিসাবটি খোলা হয়েছিল, তাঁর সন্ধান পাওয়া গেছে।

হিসাবটি খোলা হয় মোহাম্মদ মুশতাক মিঞার নামে। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত সচিব ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আকিজ উদ্দিনের বাসায় রান্নার কাজ করেন মুশতাক মিঞা।

ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন এমন অনেককে ও তাঁদের পক্ষের ব্যক্তিদের তাঁরা নির্বাচনের আগে এই হিসাব থেকে টাকা তুলতে দেখেছেন। ক্রিকেট থেকে চলচ্চিত্র তারকা, নবীন থেকে প্রবীণ প্রার্থীরাও ছিলেন এই তালিকায়। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনের খরচ চালাতে তৎকালীন সরকারের পক্ষে এই টাকা বিতরণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাইফুল আলম। এ জন্য ইউনিয়ন ব্যাংকসহ তাঁর মালিকানায় থাকা আরও ব্যাংক থেকে বেনামি ঋণ নেওয়া হয়।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ইউনিয়ন ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নানা আর্থিক অপরাধের অভিযোগ আসার পর আত্মগোপনে গেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীসহ ইউনিয়ন ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।

                              চাল-ডালের ব্যবসা করতে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছিল। তবে ব্যবসা করা হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর আকিজ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

রহস্যময় হিসাবের মালিক

মোহাম্মদ মুশতাক মিঞার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার হাজীর পাড়া গ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে মাধ্যমিক পাস। প্রথম আলোর একজন প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর দুপুরে মোহাম্মদ মুশতাক মিঞাকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে দেখতে পান। এ সময় তাঁর ব্যবসা ও ব্যাংক হিসাব নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ইতস্তত বোধ করেন। সরে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকঋণের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন, যখন তাঁর নামে এই ঋণ নেওয়া হয়, তখন সেটা তিনি জানতেন না। কীভাবে টাকা পরিশোধ করবেন জানতে চাইলে বলেন, তিনি জানেন না।

গ্রামের স্থানীয় লোকজন জানান, হাজীর পাড়া গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে মুশতাক মিঞা। এক চাচা তাঁকে লালন-পালন করেছেন। ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন মুশতাক মিঞা। পাশাপাশি আকিজ উদ্দিনের বাসার দেখভালও করেন। সবজরপাড়ায় আকিজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে মুশতাক মিঞার বাড়ির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমেরও আদি নিবাস চট্টগ্রামের পটিয়ায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, ওই গ্রামের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি ব্যবহার করে ব্যাংকঋণ নেওয়া হয়েছে, যার বিনিময়ে তাঁরা প্রতি মাসে ভাতা পান।মোহাম্মদ মুশতাক মিঞার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চাল-ডালের ব্যবসা করতে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়েছিল। তবে ব্যবসা করা হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর আকিজ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্যাংকের নথিতে মোস্তাক ট্রেডার্সের ঠিকানা পুরান ঢাকার বংশালের আগা সাদেক সড়কের ৯৬ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ওই ভবনের নিচতলায় মা ট্রেডার্স, মদিনা ট্রেডার্স, আলিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ কয়েকটি দোকান রয়েছে। তবে মোস্তাক ট্রেডার্স নামে কোনো প্রতিষ্ঠান গত ২৫ বছরে সেখানে ছিল না বলে জানান এসব দোকানের মালিকেরা।

গত ২৮ আগস্ট  শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, আকিজ উদ্দিন-সংশ্লিষ্ট মোস্তাক ট্রেডার্সের ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এরপর মোস্তাক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুশতাক মিঞা পরিচয়ে ডাকযোগে প্রথম আলোর কাছে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ বা আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে মোস্তাক ট্রেডার্সের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই প্রতিবাদপত্রে কোনো ফোন নম্বর দেওয়া হয়নি, তবে প্রতিবাদপত্রে বংশালের ১৬ নম্বর আগা সাদেক রোডের ঠিকানা দেওয়া হয়। তবে চিঠির ওপর নাম লেখা ছিল মোস্তাক মিয়া, ঠিকানা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের চৌমুহনির চারিড়াপাড়া।

ওই প্রতিবাদপত্রের সূত্র ধরে বংশালের আগা সাদেক রোডের ১৬ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, একজন মানুষ চলতে পারে এমন সরু গলি পেরিয়ে সেটি জীর্ণ একটি বাড়ির ঠিকানা। তবে সেখানেও মোস্তাক ট্রেডার্স নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2011-2025 VisionBangla24.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com