সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই যোদ্ধার অনুদান পেলেন যুবলীগ নেতা, তদন্ত কমিটি গঠন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ কান উৎসবে প্রথম টেলিভিশন নারী সাংবাদিক শাহরিন জেবিন সরকারী খোলা থাকার নির্দেশ অমান্য করে তালা ঝুলছে নিকারিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়: হাসনাত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ড সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি সহসভাপতি রানার পিতা টি এম মহশীনের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল উদয়ন আইডিয়াল স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন সচেতনতা বাড়াতে ৮০০ ছাত্রীর মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ ইমান আকিদা ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন চালিয়ে যাবে: মাওলানা শাহজাহান
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হংকং প্রবাসীর নির্মাণাধীন খামার থেকে চাঁদা দাবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হংকং প্রবাসীর নির্মাণাধীন খামার থেকে চাঁদা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী:

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬ নম্বর কাদিরপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালা সর্দার পোলের উত্তর পাশে একটি গরুর খামার নির্মাণ করছেন হংকং প্রবাসী তোফাজ্জল হোসেন। বিদেশে রোজগার করা কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে নিজ এলাকায় একটি সম্ভাবনাময় কৃষিভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই উদ্যোগ আজ সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ চক্রের হুমকিতে মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে।

খবরে প্রকাশ, নির্মাণাধীন খামারটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রহরীর মাধ্যমে অজ্ঞাত পরিচয়ের একদল ব্যক্তি বারবার চাঁদা দাবি করে আসছে। তারা হুমকি দিচ্ছে—চাঁদা না দিলে খামারের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে, এমনকি শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখিও হতে হবে। এ ধরণের ঘটনা শুধু তোফাজ্জল হোসেনের নয়, বরং নোয়াখালীর বহু এলাকায় প্রবাসীদের সম্পদ ও উন্নয়নমুখী উদ্যোগ আজ এমন হুমকির মুখে।

গ্রামীণ উন্নয়ন ও প্রবাসীদের স্বপ্নের সাথে সন্ত্রাসের সংঘর্ষ:

প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রবাসীরা পাঠান। অনেকেই দেশের মাটিতে কৃষিভিত্তিক কিংবা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার চেষ্টায় থাকেন। ঠিক সেই ধরণের একটি প্রচেষ্টার নাম তোফাজ্জল হোসেনের গরুর খামার। তবে তার মতো একজন প্রবাসী যখন নিজ এলাকায় জমি কিনে বৈধ উপায়ে গরুর খামার গড়তে যান, তখন সেখানে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী বা সন্ত্রাসী চক্র চাঁদা দাবি করে বসে।

কালা সর্দা পোলের পাশে এমন নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই একাধিকবার অজ্ঞাত লোকজন এসে নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। শুধু দাবি করেই থেমে থাকেনি, তারা সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, “চাঁদা না দিলে গায়ের জোরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।” এ পরিস্থিতিতে খামার কর্তৃপক্ষ আতঙ্কগ্রস্ত, পাশাপাশি স্থানীয় সাধারণ মানুষও চরম উদ্বেগে রয়েছেন।

প্রশাসনের নীরবতা নাকি সীমিত সক্ষমতা?

ভুক্তভোগী প্রবাসীর পরিবার ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় থানার ওসিকেও অবহিত করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের মতে, এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। চাঁদাবাজি, জমি দখল, নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া—এসবই তাদের নৈমিত্তিক অপকর্মের অংশ। প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ না থাকায় তাদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছেই।

সাংবাদিকের অনুসন্ধানে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণাধীন খামারটির নির্মাণকাজ চলছে। তবে কয়েকদিন ধরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান,

“প্রতিদিন বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে ২/৩ জন লোক বাইকে এসে খামারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তারা আমাকে ডেকে বলে, মালিককে বলো, যেটুকু বলছি দিয়ে দিক। না হলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কয়েকদিন আগে তো সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছে, দরকার হলে গুঁড়িয়ে দেব।”

আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা তো চিনি কারা এগুলো করে। কিন্তু বলি না, ভয় পাই। প্রশাসন কিছু না করলে প্রবাসীরা আর গ্রামে ফিরে কোনো কাজ করতে পারবে না।”

চাঁদাবাজি আইনে স্পষ্ট শাস্তির বিধান থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারা অনুযায়ী, চাঁদা দাবি করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। জোর করে, হুমকি দিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে কারো কাছ থেকে অর্থ আদায় করলে তা চাঁদাবাজির আওতায় পড়ে। তবে বাস্তব চিত্র হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা হয় না। কারণ প্রবাসীরা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ভয়ভীতির কারণে মামলা করতে সাহস পান না।

একটি খামারের গল্প, হাজারো প্রবাসীর বেদনা:

তোফাজ্জল হোসেনের খামার শুধু একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়, এটি তার জীবনের অর্জন ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। কিন্তু কিছু দুষ্টচক্রের কারণে তার স্বপ্ন আজ ধ্বংসের মুখে। তিনি ভিডিও কলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি দূরদেশ হংকংয়ে অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়েছি। প্রবাস জীবন আর কতো! নিজে যেন দেশে কিছু করতে পারি—এই আরশায় খামার করতেছি। এখন যদি চাঁদা না দিই, কাজই করতে দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছে। আমি কি দেশে ফিরে ব্যবসা করবো না?” এই প্রশ্ন শুধু তোফাজ্জল হোসেনের নয়, হাজারো প্রবাসীর।

প্রশাসনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ কামনা করে ভূক্তভোগী জানান, এলাকাটি চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সন্দেহভাজনদের নজরদারির আওতায় আনা জরুরি।

এলাকার সচেতন মহল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিদেশফেরত বা বিদেশে থাকা প্রবাসীদের সম্পদ রক্ষায় আলাদা সেল গঠন করা দরকার, যারা এই ধরণের সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।

তোফাজ্জল হোসেনের খামার এখন প্রশ্নবিদ্ধ শুধু সন্ত্রাসের কারণে নয়, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়েও। চাঁদাবাজির মতো ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দেশজুড়ে প্রবাসী উদ্যোগগুলো হুমকির মুখে পড়বে। আর তা হবে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের জন্য একটি বড় বিপর্যয়।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com