মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ “কেঁদো না কেঁদো না, মাকে কে বলেছে কালো/ মা ঈষৎ হাসিতে তোর ত্রিভুবন আলো। কে দিয়েছে গালি তোরে/ মন্দ সে মন্দ/ যে বলেছে কালী তোরে, অন্ধ সে অন্ধ”। শ্যামা সংগীতের অমর বানীকে ধারন করে প্রায় সাড়ে চারশ’ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ট্রাষ্টী) প্রণব রঞ্জন দত্ত বাবু জানান, দেশের মধ্যে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দিরটি প্রায় সাড়ে চারশ’ বছরের পুরনো। ইতিহাসের আলোকে তিনি বলেন, বার্থী এলাকার জমিদার প্রয়াত ভুবতী কান্ত বক্শি প্রথমে তাঁরা মায়ের মন্দিরের নামে ৫৭ শতক জমি দান করেন। দেশের একমাত্র ঐহিত্যবাহী তাঁরা মায়ের মন্দিরটি গৌরনদীর বার্থী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারই নামানুসারে একে একে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তাঁরাকুপি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাঁরাকুপি নামের একটি গ্রাম। বাংলা ১১১১ সালে বরিশালের বিখ্যাত জমিদার রাম লাল ভট্টাচার্য তাঁরা মায়ের মন্দিরের পাকা ভবন নির্মান করে দেন। পরবর্তীতে বরিশালের অন্যতম দানশীল ব্যক্তিত্ব কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও বিজয় কৃষ্ণ দে’র আর্থিক সহায়তায় তাঁরা মায়ের মন্দিরটি সুরম্য অট্টালিকায় দৃষ্টিনন্দন মন্দিরে রূপ লাভ করে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার তাঁরা মায়ের ভক্তদের অনুদানে প্রসিদ্ধ সার্বজনীন এ মন্দিরটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
পূজা উদ্যাপন কমিটির মন্দির কমিটির সহসভাপতি (ট্রাষ্টী) ডাঃ মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, অশান্ত বিশ্বে আজ পারস্পারিক হানাহানি। মানব জীবন মোহময় ও অন্ধকারছন্ন। এ মোহময় অন্ধকার দূর করতে, জীবনের দুঃখ মোচন ও শান্তি অর্জনের এবং জগতের মঙ্গলার্থে প্রতিবছরের বাংলা ১২ই চৈত্র ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে তাঁরা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী তাঁরা মায়ের মন্দিরের বাৎসরিক পূজা উপলক্ষে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের লাখো ভক্তের সমাগম ঘটে। পূজা উপলক্ষে মন্দিরকে সাজানোর হয়েছে নববধুর সাজে। মন্দিরের চারপাশে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনের গ্রামীণ মেলার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল থেকে কালী পূজা শুরু হবে। মন্দিরের পুরোহিত অনিল চন্দ্র পূজা অর্চনা করবেন। পূজার দিন সকালে চন্ডিপাঠ ও শিতলা পূজা, দুপুরে বলিদান, বিকেলে গীতাপাঠ, সন্ধ্যায় মায়ের সামনে আরতি প্রতিযোগীতা, রাতে প্রসাদ বিতরণ ও শিবাভোগ, গভীর রাতে ধর্মীয় গান অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরা মায়ের মন্দিরের ভক্ত স্বজল ঘোষ জানান, পূজা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মন্দিরের ভক্তরা আসতে শুরু করেছে। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মুনিরুল ইসলাম মুনির জানান, পূজা উপলক্ষে মন্দির এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।