বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:২৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বেলকুচিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযান, ১৬২টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ঝিনাইগাতীতে “সৌরভ চত্বরের “মোড়ক উন্মোচনে বিতর্কিত ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে গুঞ্জন ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪২৮ জন টানা বর্ষণে রূপগঞ্জে ত্রিশ গ্রাম জলাবদ্ধতায় প্লাবিত: লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি দুর্নীতির অভিযোগে ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডে দুদকে-র অভিযান শেরপুর সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় মোবাইলের ডিসপ্লে জব্দ জালিয়াতি ও প্রতারণা করে তথ্য পাচারের অভিযোগে আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে এসএসসি পরিক্ষার্থী অপহরণের আড়াই মাস পর উদ্ধার হাসনাত-সারজিস-জারাসহ ৫ নেতাকে শোকজ এনসিপির লালমনিরহাটে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ডের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
টানা বর্ষণে রূপগঞ্জে ত্রিশ গ্রাম জলাবদ্ধতায় প্লাবিত: লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

টানা বর্ষণে রূপগঞ্জে ত্রিশ গ্রাম জলাবদ্ধতায় প্লাবিত: লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ঢাকার উপকন্ঠের রূপগঞ্জের তিন লাখ বাসিন্দা উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। আকাশে মেঘ জমলেই  নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের ভেতরে বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এলাকার কোথাও জমেছে হাঁটু সমান পানি। আবার কোথাও কোমর সমান পানি। তারাবো পৌরসভার আভ্যন্তরিণ পানি নিষ্কাশনের খাল সংস্কার করলেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন টানা বর্ষণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৩০টি এলাকায় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। জলাবদ্ধতা এখানে স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখল হয়ে ভরাট হওয়ার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রচ- দুর্ভোগে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার তারাবো, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল, মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, বাক্সোর্চা, খালপাড়, ইসলামবাগ, আমলাবো, কালী, আমলাবো মুসলিমপাড়া, ডুলুরদিয়া, গোলাকান্দাইল নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, মদিনানগর, তারাবো পৌরসভার তেঁতলাবো, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, উত্তর মাসাবো, যাত্রামুড়া, রূপসী ও ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, সোনাবো, পাঁচাইখা ও ইসলামপুরসহ আশপাশের এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দি এসব এলাকার ৫০ হাজার মানুষ। কারো কারো বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পরিমাণ। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। বাড়িতে পানি ওঠায় কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছে। কয়েকটি শিল্পকারখানায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। শিল্পকারখানার নির্গত কেমিক্যাল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে সয়লাব অনেক এলাকা। এতে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সি মানুষ।
১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়রগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১শ’ ১ কোটি ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ের ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ হওয়ার ক’বছর বাদেই এখানে শুরু হয় জলাবদ্বতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্ভোগও।
৯০ দশকের পর নিয়মবহিভূর্তভাবে অগ্রনীর ভেতরে মিল-কারখানা গড়ে উঠলে অগ্রনী পরিনত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ চরমে উঠে মানুষের। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিবছর বাড়ে জলাবদ্বতাও।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কারকাজের বর্জ্য ফেলে পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে দেওয়ায় তারাবো আল-ফালাহ জামে মসজিদ ও কবরস্থানেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে সমস্যা হচ্ছে। কবরস্থানেও লাশ দাফন করা যাচ্ছে না। তারবো আল-ফালাহ জামে মসজিদের
গোলাকান্দাইল গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া বলেন, খাল খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বহু আবেদন ও নিবেদন করেও কোনো ফল হচ্ছে না।
গোলাকান্দাইল মধ্যেপাড়া গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী নাঈম মিয়া বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে নিম্নআয়ের মানুষদের সমস্যা হচ্ছে বেশি। শিল্পকারখানার নির্গত বর্জ্যে পানি নিষ্কাশন খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পকারখানা থেকে নির্গত কেমিক্যালযুক্ত পানি জমে থাকা পানিতে এসে মিশছে। আর কুচকুচে কালো বিষাক্ত এই পানিতে হাঁটাচলা করতে গিয়ে মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কীটপতঙ্গ, মাছ মরে গিয়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির ত্রুখে পড়ছে।
দক্ষিণপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, আমাদের বাড়িঘরে হাঁটুসমান পানি উঠেছে। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারি না। বিশুদ্ধ পানি নেই। জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ির অনেক ভাড়াটিয়া এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। গোলাকান্দাইল এলাকার শিক্ষক রতন লাল বলেন, শিল্পাঞ্চল হওয়ায় রূপগঞ্জে জমির দাম বেশি। তুলনামূলকভাবে নিচু জমির দাম কম। তাই অনেকেই নিচু অঞ্চলে কম দামে জমি ক্রয় করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। আর সে কারণেই নির্মিত ঘরবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তারাবো পৌরসভার শান্তিনগর গ্রামের রওশন আলী বলেন, ১৪-১৫ বছর ধরে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের বাঁচতে হচ্ছে। বানিয়াদী এলাকায় সুইজগেট থাকলেও সেখানে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সময়মতো মেশিন চালু না রাখায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পাম্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
মৈকুলি গ্রামের মোহাম্মদ মেহেদী হাছান বলেন বলেন, বছরের পর বছর ধরে একই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা হলেও বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দুর্ভোগকে মেনে নিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, জলাবদ্ধতা যেন আমাদের নিয়তি হয়ে গেছে।
বরপা গ্রামের মুনছুর আলী বলেন, বৃষ্টি শুরু হলেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়। কোমর পানি পার হয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হয়। দোকানে পানি, অফিসে পানি জীবনটা যেন থমকে যায়। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান নেই।
বরপা বাগানবাড়ি গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রায় প্রতি বর্ষায় পানির নিচে ডুবে থাকি। একটু বৃষ্টি হলেই শান্তি নগর শান্তিতে থাকে না। রাস্তা-ঘাট, ঘরের উঠানসহ সব জলে ভরে যায়।
স্কুলগামী শিশু, অফিসগামী মানুষ, রোগী সবাই ভোগান্তিতে পড়ে।
রূপসী কাহিনা গ্রামের মাহমুদুল হাসান ইমন বলেন, জলাবদ্ধতার পানি শুধু চলাচলে অসুবিধা নয়। একেকটা রোগের উৎস হয়ে উঠছে, বিশেষ করে চর্মরোগ, এলার্জি, ঘা, চুলকানি লেগেই থাকে।
রূপগঞ্জে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, খাল-বিল ভরাট হওয়া, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ও অচল পাম্পমেশিন এই তিনটি কারণেই মূলত জলাবদ্ধতা হচ্ছে। আপাতত আমরা নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি জলাবদ্ধতা নিরসনে জন্য আশা করি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করবো।
রূপগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, রূপগঞ্জের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে দ্রুত।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com