শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, লক্ষীচাপ:
লক্ষীচাপ বল্লমপাঠের যুব সমাজ এবার ফুটবলের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চলেছে। আগামীকাল বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক বিশেষ প্রীতি ম্যাচ, যার মূল উদ্দেশ্য হলো যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা এবং ক্রীড়ার মাধ্যমে সুস্থ ও সৃজনশীল জীবনধারার প্রচার করা। এই উদ্যোগটি স্থানীয় সমাজের জন্য এক অনন্য উদাহরণ, যেখানে ক্রীড়া, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং যুবসংস্কৃতি একত্রিত হয়ে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
লক্ষীচাপের এই প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল— লক্ষীচাপ বল্লমপাঠ যুব সমাজ এবং লক্ষীচাপ নব বিবাহিত যুব সমাজ। দুই দলের মধ্যে এই ম্যাচের জন্য চলতি মাস ধরে প্রস্তুতি চলে আসছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই ম্যাচ কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ, যা যুব সমাজকে মাদক, অপকর্ম ও অযথা সময় নষ্টের থেকে দূরে রাখবে।
প্রীতি ম্যাচের প্রেক্ষাপট
লক্ষীচাপ এলাকা বহু বছর ধরে যুবসমাজের ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদকাসক্তি এবং অনিয়মিত জীবনধারা যুবকদের মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য স্থানীয় সমাজকর্মী ও যুব নেতৃত্বরা নিয়মিত সভা ও সচেতনমূলক কর্মকাণ্ড আয়োজন করছে।
ম্যাচটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন স্থানীয় স্কুল ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার চাপ, অবসর সময় এবং প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে বিপর্যস্ত। আয়োজকরা মনে করেন, ক্রীড়া এবং বিশেষ করে ফুটবল যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, তেমনি মানসিক দৃঢ়তা এবং দলগত নেতৃত্বের গুণাবলীও বৃদ্ধি করে।
সাংবাদিক রিপন খান, সমাজসেবী মকছেদুল ইসলাম, ফ্রিল্যান্সার ও ব্যবসায়ী মসলেম উদ্দীন, এবং তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল ইসলাম এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করছে। তাদের প্রত্যেকেরই যুব সমাজ এবং সামাজিক কল্যাণের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তারা বলছেন, এই ম্যাচ যুব সমাজকে কেবল খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্থ রাখবে না, বরং তাদের মধ্যে নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধও বৃদ্ধি করবে।
দলগুলোর পরিচিতি ও নেতৃত্ব
লক্ষীচাপ বল্লমপাঠ যুব সমাজ
লক্ষীচাপ বল্লমপাঠ যুব সমাজ একটি ঐতিহ্যবাহী যুব সংগঠন, যা প্রায় ১৫ বছর ধরে স্থানীয় ক্রীড়া, শিক্ষা ও সমাজসেবায় সক্রিয়। দলটি বিভিন্ন ফুটবল, ক্রিকেট এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। বিশেষ করে, তাদের ফুটবল দলটি এলাকায় খ্যাতি অর্জন করেছে কঠোর প্রশিক্ষণ, সততা এবং দলবদ্ধ কাজের জন্য। এই দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে থাকছেন মো: রাসেল ইসলাম, যিনি দলকে মাঠে নেতৃত্ব দেবে এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
লক্ষীচাপ নব বিবাহিত যুব সমাজ
এই দলটি ৩০ বছরের পুরোনো এবং মূলত নব বিবাহিত যুবকদের নিয়ে গঠিত। দীর্ঘ এই সময়ে দলটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে এবং নিজেদের সৃজনশীলতা ও খেলোয়াড়ি দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। যদিও দলটি তুলনামূলকভাবে নতুন নয়, তবে তাদের খেলোয়াড়রা অভিজ্ঞ এবং মাঠে দারুণ কৌশলগত খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। এই দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে থাকছেন সাংবাদিক রিপন খান, যিনি দলকে মাঠে নেতৃত্ব দেবেন এবং দলের পরিকল্পনা ও সমন্বয় নিশ্চিত করবেন।
উভয় দলের সদস্যরা বলছেন, কেবল জয় ও হার নয়, বরং তাদের লক্ষ্য হলো ফুটবল খেলার মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদক ও অযথা সময়ের ব্যর্থতা থেকে দূরে রাখা। এই মনোভাব তাদের মাঠে আরও আত্মবিশ্বাসী এবং উদ্যমী করে তুলছে।
আয়োজক কমিটির ভূমিকা
এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজক কমিটি স্থানীয় যুব সমাজের মধ্যে একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রদর্শন করছে। সাংবাদিক রিপন খান জানিয়েছেন, “আমরা চাই যুব সমাজকে প্রমাণ করতে, যে তারা নিজেদের জীবনকে নষ্ট না করে, সুন্দর ও সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে। এই প্রীতি ম্যাচ তার একটি উদাহরণ।”
সমাজসেবী মকছেদুল ইসলাম বলেন, “ক্রীড়া এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা সম্ভব। আমরা চাই, এই ম্যাচ একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা হোক, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।”
ফ্রিল্যান্সার ও ব্যবসায়ী মসলেম উদ্দীন মন্তব্য করেছেন, “যুবদের সৃজনশীল ও সক্রিয় রাখতে হলে আমাদের এমন উদ্যোগ আরও বেশি করে করতে হবে। খেলাধুলা কেবল শারীরিক উন্নতি ঘটায় না, বরং যুব সমাজকে সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ও নৈতিকভাবে দৃঢ় করে তোলে।”
তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল ইসলাম যোগ করেন, “আমরা চাই এই প্রীতি ম্যাচ যুব সমাজের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করার মনোভাব তৈরি করবে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্যও উপকারি হবে।”
স্পন্সার ও প্রধান অতিথি
ম্যাচের স্পন্সার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশিষ্ট ব্রয়লার খামারী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, “এই ধরনের সামাজিক ও ক্রীড়ামূলক উদ্যোগে স্পন্সার হিসেবে অংশগ্রহণ আমার কাছে গর্বের। আমরা চাই খেলোয়াড়রা মাঠে শুধু খেলবে না, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সততার দিকেও মনোযোগ দেবে।”
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লেখক ও সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন। তিনি যুব সমাজের মাদকবিরোধী প্রচেষ্টা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করবেন। মনোয়ার হোসেন বলেছেন, “লক্ষীচাপ এলাকার এই প্রীতি ম্যাচ যুব সমাজকে ক্রীড়া এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মাদকমুক্ত রাখার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যুব সমাজই দেশের ভবিষ্যত, এবং তাদের সঠিক দিশা দেখানো আমাদের দায়িত্ব।”
ম্যাচের গুরুত্ব
উভয় দলই ম্যাচের জন্য মাসব্যাপী প্রস্তুতি নিয়েছে। স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা জানিয়েছেন, এটি কেবল একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, বরং যুব সমাজের মধ্যে সৃজনশীলতা, দলগত মানসিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার একটি প্রয়াস।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, এই ম্যাচ যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে একটি কার্যকরী সামাজিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এলাকার অন্যান্য যুব সংগঠনও এই উদ্যোগকে অনুসরণ করতে উৎসাহী।
যুব সমাজে প্রভাব
এই প্রীতি ম্যাচ কেবল একদিনের ক্রীড়া অনুষ্ঠান নয়। আয়োজকরা মনে করেন, এটি স্থানীয় যুব সমাজের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা এবং সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলবে। যুবকদের মানসিক চাপ কমানো, শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি এবং মাদকবিরোধী মনোভাব তৈরি করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এমন ধরনের প্রীতি ম্যাচ যুবকদের সামাজিক ও নৈতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি যুব সমাজকে খেলাধুলার মাধ্যমে মাদক ও অপকর্ম থেকে দূরে রাখতে সহায়ক হবে।
—
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
লক্ষীচাপ এলাকার যুব নেতারা এই ধরনের উদ্যোগকে নিয়মিত করার পরিকল্পনা করছেন। তারা বলছেন, আগামী বছরে আরও বড় ও বিস্তারিত ফুটবল লিগ, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং শিক্ষামূলক কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
আয়োজকরা আশা করছেন, স্থানীয় প্রশাসন, সমাজকর্মী, শিক্ষক এবং অভিভাবকরা তাদের সাথে যুক্ত হয়ে এই ধরনের উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে সম্প্রসারিত করবে। তাদের লক্ষ্য, লক্ষীচাপ এলাকা যুবসমাজের জন্য একটি মাদকমুক্ত, সৃজনশীল ও সুস্থ সমাজ হিসেবে পরিচিত হবে।
স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা
স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমী ও সাধারণ মানুষও এই ম্যাচে উপস্থিত থাকার জন্য উৎসাহী। তারা জানাচ্ছেন, এই ধরনের প্রীতি ম্যাচ কেবল ক্রীড়া নয়, বরং যুব সমাজকে মাদক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার একটি সামাজিক আন্দোলন।
একজন স্থানীয় অভিভাবক বলেছেন, “আমরা চাই আমাদের সন্তানরা মাদক ও অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকুক। ফুটবল ম্যাচের মতো উদ্যোগ তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সাহায্য করবে।”