নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব বাজারে প্রতিদিন ছেঁড়া, বিবর্ণ ও দুর্গন্ধযুক্ত নোট হাতবদল হচ্ছে, আর এই নোটগুলো কেবল অর্থপ্রদানের মাধ্যম নয়—সংক্রমণের বাহকও হয়ে উঠছে। মাছ, মাংস, সবজি ও খোলা বাজারে বিক্রেতারা ঝামেলা এড়াতে পুরোনো নোট জমিয়ে রাখেন এবং লেনদেনে সেগুলোই ব্যবহার করেন। কারণ ব্যাংকে নষ্ট নোট জমা দিলে নানা অজুহাতে তা গ্রহণ করা হয় না, নতুন নোটও পাওয়া যায় না সহজে। ফলে বাজারজুড়ে এখন সেলোটেপ মারা, লেপ্টে থাকা, মলিন নোটই চলছে। এসব নোট প্রতিদিন শত শত মানুষের হাতে হাত বদল হয়; অনেকে এই নোটে খাবার কেনেন, শিশুরা বড়দের কাছ থেকে নোট নিয়ে খেলতে গিয়ে মুখে দেয়, আর অদৃশ্য জীবাণু অজান্তেই শরীরে প্রবেশ করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ময়লা ও ছেঁড়া নোট স্ট্যাফিলোকক্কাস, ই-কোলাই, সালমোনেলা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে, যা শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। নোটের গায়ে থাকা এসব জীবাণু সহজেই খাবার, পানীয় বা হাতের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ছড়াতে পারে। অর্থনীতির একটি অপরিহার্য উপাদান টাকা—কিন্তু সেটিই যদি রোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ছেঁড়া বা নষ্ট নোট ব্যাংকে জমা দিয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো নানা অজুহাতে সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে দেয়। কোনো নোট বেশি নষ্ট, আবার কোনো নোটের নম্বর স্পষ্ট নয়—এইসব কারণ দেখিয়ে নোট বদলে দিতে অনীহা প্রকাশ করে ব্যাংক কর্মকর্তারা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদাসীনতা সাধারণ মানুষকে নীরবে সংক্রমণের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
টাকা কেবল লেনদেনের মাধ্যম নয়, এটি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বাজারে প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ নোংরা নোট চলাচল করছে, তার মাধ্যমে গোটা জাতি অজান্তেই রোগবাহী এক অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে। ছেঁড়া-নোংরা নোটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিতে পারে, যা কোনো দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়।