একটি সড়ক—আর তাতেই বদলে যেতে পারে লক্ষাধিক চরবাসীর জীবনমান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)-এর অর্থায়নে এবং বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস-এর তত্ত্বাবধানে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বটতলা থেকে টেংরারভিটা পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে এ সড়ক পাকা সড়কে রূপান্তরিত হবে।
এই সড়ক বাস্তবায়নের খবরে দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ, নুনখাওয়া ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে শহরমুখী হওয়া ছিল এসব এলাকার মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে আরডিআরএস এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ। দাতা সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কাঁচা রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, গত ১৬ নভেম্বর ২০২৫ থেকে সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রাস্তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “এই সড়ক শুধু আমার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ হাজার মানুষের জন্য নয়, বরং দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ, নুনখাওয়া ও নারায়ণপুর এলাকার লক্ষাধিক চরবাসীর জীবনযাত্রা সহজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এতদিন মানুষকে মেঠোপথ ধরে জেলা শহরে যেতে হতো। “একজন গর্ভবতী নারীকে বাঁশের ভারে করে আনার সময় পথেই সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে, যা ছিল অত্যন্ত অমানবিক। এই সড়ক হলে এমন কষ্ট আর থাকবে না,” বলেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান (৬০) বলেন, “বন্যার সময় চারদিকে পানি থৈথৈ করে। তখন ডিঙি নৌকা আর কলাগাছের ভেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এই রাস্তা হলে আমাদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে।”
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই এলাকায় দুটি লেক রয়েছে। সেগুলো সংস্কার করে পর্যটনের উপযোগী করা গেলে বাইরের পর্যটকরাও আসতে পারবেন। এতে এই সড়ককে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
তিনি বলেন, “মানুষ সহজে তাদের উৎপাদিত ফসল, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও শাকসবজি শহরে নিয়ে বিক্রি করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারবে, অসুস্থ হলে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।” এজন্য তিনি ডব্লিউএফপিকে ধন্যবাদ জানান।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, “চরের জীবনমান উন্নয়ন ছাড়া কুড়িগ্রামের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।” তিনি জানান, সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সড়কটি বাস্তবায়িত হলে দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন লক্ষাধিক মানুষ অন্তত যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বস্তি পাবে।
তিনি আরও বলেন, “ডব্লিউএফপি প্রায় ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটির কাজ শুরু করেছে। এই সড়কের উপরিভাগের প্রস্থ হবে ১২ ফুট এবং উচ্চতা হবে ৬ ফুট। ইতোমধ্যে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সাইনবোর্ডের মাধ্যমে প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করেছে।” একই সঙ্গে তিনি সড়ক নির্মাণে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির আশ্রয় না নিতে এলাকাবাসী ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।